বিএনপির অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশনগুলোর প্রস্তাবে রাজনীতিকদের গুরুত্বহীন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে অনির্বাচিতদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার পথ তৈরি করা হয়েছে। দলটির দাবি, প্রস্তাবনায় এমন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যাতে স্তরে স্তরে অনির্বাচিত ব্যক্তিরা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, যা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্বহীন করে তুলবে।
শনিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, সংস্কার বিষয়ে দলের মতামত রোববার ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে।
কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আপত্তি
লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) বেশ কিছু কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব কমিশনের কার্যপরিধি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কার্যত আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল ও ক্ষমতাহীন করবে। ফলে দুর্বল ও অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মতামতের মিল রয়েছে, যা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। এতে গণতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষিত হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিএনপির আপত্তি স্প্রেডশিট ও সুপারিশ নিয়ে
মির্জা ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে টিক চিহ্ন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যেখানে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, এসব প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য কি না।
তিনি আরও জানান, স্প্রেডশিটে ৭০টি প্রস্তাব থাকলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ প্রায় ১২৩টি। একইভাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি রাখা হয়েছে। তিনি মনে করেন, মূল সুপারিশমালার সঙ্গে মতামত সংযুক্ত করলে বিভ্রান্তি দূর হবে।
সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে
সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কারের উদ্দেশ্য হলো জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি করা যেতে পারে, যা নির্বাচিত সরকার পরে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা এবং এরপর দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।
অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সুযোগ যেন না থাকে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনে জড়িত থাকায় জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন যন্ত্রকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রমাণও প্রকাশ পাচ্ছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গ
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান উপযুক্ত সময়ে দেশে ফিরবেন। এ বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। যখন মনে হবে সঠিক সময় এসেছে, তখনই তিনি ফিরবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron