আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নয়, বরং কার্যক্রম স্থগিত: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস

print news
img

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, বরং রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার (১২ জুন) যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন থিঙ্কট্যাংক চ্যাথাম হাউসে আয়োজিত এক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

চ্যাথাম হাউসের পরিচালক ব্রনওয়ে ম্যাডক্স-এর সঞ্চালনায় আলাপচারিতায় ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্ব—সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও নির্বাচন—বিস্তারে তুলে ধরেন।

এক পর্যায়ে সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, “জুলাই সনদের আওতায় যদি কোনো দল, বিশেষত আওয়ামী লীগ, জায়গা না পায় তবে কীভাবে এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলা যায়?”

উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “হ্যাঁ, বিতর্ক আছে। বিতর্ক হলো, আওয়ামী লীগ কি আদৌ রাজনৈতিক দল? তারা যদি তরুণদের হত্যা, গুম, দুর্নীতি করে থাকে, তাহলে আমরা তাদের রাজনৈতিক দল হিসেবে দেখি কি না—এটি একটি খোলা প্রশ্ন। আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি।”

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রস্থানের পর মনে করা হয়েছিল, এটি শেষ। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখনও প্রবাস থেকে উসকানি দিচ্ছে। তাদের কেউ অনুশোচনা বা দুঃখ প্রকাশ করেনি। আমরা ভাবছি এটা শেষ, কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে তা এখনো চলছে।”

কার্যক্রম স্থগিতের কারণ ব্যাখ্যা করে ইউনূস বলেন, “আমরা নিরাপদ বোধ করি না। তারা এখনও রাস্তায় সংঘর্ষে উসকানি দেয়, অভ্যুত্থানের নেতাদের হুমকি দেয়। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে আমরা তাদের কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত রেখেছি, নিষিদ্ধ নয়। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।”

সঞ্চালক প্রশ্ন তোলেন, বিচার কেন নির্বাচিত সরকারের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়নি?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, “এই দায়িত্ব আমি নিজে নিইনি। যারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারাই আমাদেরকে এই বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ম্যান্ডেট দিয়েছেন।”

নির্বাচনের সময় ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা হলে ড. ইউনূস দৃঢ়ভাবে বলেন, “এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন। এটা কেবল আরেকটি নির্বাচন নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের ভোট।”

মিডিয়া স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এটা সত্য নয় যে সংবাদমাধ্যম দমন-পীড়নের শিকার হচ্ছে। তাদের জীবনে এত স্বাধীনতা কখনো ছিল না। তারা যা খুশি বলতে পারছে।”

এই আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিক, সাংবাদিক, গবেষক এবং নীতি বিশ্লেষকরা। পুরো সংলাপে ড. ইউনূসের বক্তব্যে একাধিকবার নতুন বাংলাদেশের অভিমুখে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক রূপান্তরের সংকল্প প্রতিধ্বনিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *