“আমরা মালিক হব না, সেবক হব” — সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত আমিরের ঘোষণা

print news
img

নিজস্ব প্রতিবেদক |
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি দেশের সেবা করার সুযোগ পায়, তাহলে তারা মালিক নয়, বরং সেবক হিসেবে কাজ করবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফ্যাসিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা
সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আগামীর বাংলাদেশে আরেকটি লড়াই হবে ইনশাআল্লাহ। একটি লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আরেকটি হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে—মূল উৎপাটনের জন্য। তারুণ্য ও যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়ে আমরা বিজয় লাভ করব।”

জামায়াত থাকবে দায়বদ্ধ, দুর্নীতি সহ্য করবে না
তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করলে কোনো এমপি বা মন্ত্রী সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না, ট্যাক্স ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করবেন না এবং নিজের হাতে টাকা চালাচালি করবেন না। নির্দিষ্ট বরাদ্দে কাজ শেষ হলে দেশের জনগণের কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করতে বাধ্য হবেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “চাঁদা আমরা নেব না, দুর্নীতি করব না, কাউকে চাঁদা নিতে দেব না, দুর্নীতিও সহ্য করব না।”

শ্রেণিভিত্তিক নয়, সবার মুক্তির জন্য সংগ্রাম
ডা. শফিক বলেন, “আমি শিশুদের বন্ধু, যুবকদের ভাই, বয়স্কদের সহযোদ্ধা। আমি রাস্তার পরিচ্ছন্নতাকর্মী, চা-বাগানের শ্রমিক, রিকশাচালক, কৃষক—সবার পক্ষেই কথা বলতে এসেছি, কোনো অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে নয়।”

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের আকাঙ্ক্ষা
তিনি বলেন, “আফসোস, আমি ২০২৪ সালে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁদের একজন হতে পারলাম না। আমি দোয়া চাই, ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ে যেন আল্লাহ আমাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন।”

পুরনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
জামায়াত আমির বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর, শাপলা চত্বর, পিলখানা এবং ২০২৪ সালের গণহত্যাসহ যারা এসব করেছে, বাংলার মাটিতে তাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “পুরনো ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না। এত মানুষের আত্মত্যাগ বৃথা হতে দেওয়া যাবে না। যদি সেই পুরনো পচা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে চান, তবে জীবন দেওয়া শহীদদের প্রাণ ফিরিয়ে দিন।”

জাতীয় ঐক্যের ডাক
ডা. শফিকুর রহমান সবাইকে জাতীয় ঐক্যে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “অন্যদের ছোট না করে, রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রেখে জাতীয় ঐক্যের বীজতলা গড়ে তুলতে হবে। অহংকার করলে বুঝতে হবে, ফ্যাসিবাদ আমাদের ভেতরেই বাসা বেঁধেছে।”

সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম
সকাল সাড়ে ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। মূল পর্ব দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। তার আগে দুপুর ১২:৩০ মিনিটে সমাবেশস্থলে পৌঁছান ডা. শফিকুর রহমান। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে সমাবেশে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *