আসন্ন নির্বাচন, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও জাতীয় ঐক্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

print news

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে।

মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার তার এই ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করে। ভাষণে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।

গুজব ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখনো এক যুদ্ধাবস্থায় আছি। “গুজব” হলো বিরোধী শক্তির প্রধান অস্ত্র। এই গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং গুজবের প্রকৃত উৎস খুঁজে বের করতে হবে।’ তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমরা আমাদের অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে দেব না।’

অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, রমজান ও ঈদে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে জনগণ স্বস্তি পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে ভয়াবহ লুটপাটের কারণে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগের ফলে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরেছে এবং মূল্যস্ফীতি ৯.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি আগামী জুনের মধ্যে আরও হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রচেষ্টা

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়ে ২.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।’ একইসঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

আগামীকাল তিনি চার দিনের সফরে চীন যাচ্ছেন, যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এবং শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। চীনের সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানান তিনি।

দুর্নীতি দমন ও আইনি সংস্কার

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে দুর্নীতিকে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, ‘সীমাহীন দুর্নীতি আমাদের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাই, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

তিনি জানান, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ৬,২৯৫টি মামলা ইতোমধ্যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে বিচারাধীন ৪১৩টি মামলা বাতিল করা হয়েছে।

জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ও আগামী নির্বাচন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ৩৮টি রাজনৈতিক দলের মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে। এই সনদের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

নারী ও সংখ্যালঘু অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারীদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার হরণ আমাদের জাতির জন্য সংকট সৃষ্টি করবে। আমাদের অবশ্যই একটি সমতা ও ন্যায়ের ভিত্তিতে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণের শেষাংশে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের পটভূমি বদলাতে চাই। নতুন ভবিষ্যতের জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *