

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও তীব্র আলোচনা। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর স্পষ্ট বার্তা—তারা ইউনূসের বিদায় নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট সময়সূচিভিত্তিক নির্বাচন রোডম্যাপ চায়।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক অনির্ধারিত আলোচনায় অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগের চিন্তার কথা জানালে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়। যদিও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ পরে জানিয়েছেন, “প্রধান উপদেষ্টা যাচ্ছেন না। তিনি অবশ্যই থাকছেন।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা তো তাঁর পদত্যাগ চাই না। আমরা চাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের রোডম্যাপ।” তিনি আরও বলেন, “যদি তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে বিকল্প খুঁজে নিতে হবে—কিন্তু এটি ব্যক্তি নয়, রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এক সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই নির্বাচন হওয়াটা বাস্তবতাবোধসম্পন্ন ও অনিবার্য।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা দেশের স্থিতিশীলতা ও অবাধ নির্বাচন চাই। রোডম্যাপ চাওয়াটা তো কোনো অপরাধ নয়।”
একই আহ্বান জানায় জামায়াত, খেলাফত মজলিস, এনসিপি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল। সকলের বক্তব্যে উঠে এসেছে—বর্তমান প্রক্রিয়ার মাঝপথে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ দেশে এক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করবে, যা কেউই কামনা করে না।
সিপিবি এবং ইসলামী আন্দোলন এক ধাপ এগিয়ে নির্বাচন তারিখ ঘোষণার দাবি জানায় এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানায়।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা চাই অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই জুলাই গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হোক। তিনি প্রত্যাশা তৈরি করেছেন, সেই দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়াটা এক ধরনের জাতীয় হতাশা তৈরি করবে।”
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলছে, তার ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট দেখা যায় না। বরং দলগুলোর চাপের কেন্দ্রে রয়েছে নির্বাচনকালীন স্পষ্টতার অভাব। অতএব, দেশের জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় এখন একটি সমন্বিত রোডম্যাপ প্রকাশ এবং রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা।