

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
গত ১২ জুন দিবাগত রাতে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা, এমনকি আবাসিক ভবনেও ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জবাবে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইরান। শুরু হয় টানা ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যাতে উভয়পক্ষই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে ইরানে। বিশেষত, মোসাদের গুপ্তচর তৎপরতায় ইসরায়েলের হাতে ইরানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় ইরানি সরকার কড়া অবস্থান নিয়েছে। দেশের ভেতর ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ইতোমধ্যেই বহু ইসরায়েলি গুপ্তচর গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে ইরান থেকে বিপুলসংখ্যক আফগান নাগরিককে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। কারণ, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, সংঘাতের সময় আফগান নাগরিক এনায়েতুল্লাহ আসগরি নামের একজন নির্মাণ শ্রমিক হতাশা নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। আফগানিস্তানে অস্থিতিশতার কারণে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন ইরানে। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে তেহরানে কাজের সুযোগ কমে গেছে এবং আসগরির বিরুদ্ধেও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। অবশেষে হাজারো আফগান নাগরিকের মতো তিনিও ইরান ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
আফগানিস্তানে ফেরার পর আসগরি বলেন, “একটা ভাড়া বাসা খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর, আর পেলেও সেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কাজের সুযোগও নেই। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এমনিতেই দেশটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এখন এখানে কীভাবে চলব তা বুঝতে পারছি না।”
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) জানিয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে ফেরত পাঠিয়েছে ইরান, যা সংঘাত-পরবর্তী সময়ের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি।
ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমেহ মোহাজেরানি মঙ্গলবার বলেন, “আমরা সবসময় ভালো আতিথেয়তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা আমাদের জন্য অগ্রাধিকার। অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “এটিকে ‘বিতাড়ন’ নয়, বরং ‘প্রত্যাবর্তন’ হিসেবে দেখা উচিত।” তবে গুপ্তচরবিরোধী অভিযান নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সূত্র: রয়টার্স