

উত্তর কোরিয়া আবারও বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে, দেশটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত একটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছে। এই উন্নয়নকে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
যুদ্ধজাহাজের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য
পশ্চিম উপকূলের নামপো শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন এই গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেটটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪০ মিটার (৪৬০ ফুট)। এটি বর্তমানে “ফিটিং আউট” পর্যায়ে রয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে জাহাজটির অভ্যন্তরীণ অবকাঠামো তৈরি এবং অস্ত্র, সেন্সর ও অন্যান্য প্রযুক্তি স্থাপন চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এতে থাকতে পারে ভ্যার্টিকাল লঞ্চিং সিস্টেম (VLS), যা থেকে সমুদ্র বা স্থলভাগের লক্ষ্যবস্তুতে মিসাইল নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে এ ধরনের সামরিক নৌ ক্ষমতা এর আগে দেখা যায়নি।
সামরিক বিশ্লেষকদের মত
সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং জাহাজ নির্মাণ বিশ্লেষক কার্ল শুস্টার বলেন, “আধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরি একটি জটিল প্রযুক্তিগত কাজ। সেন্সর, অস্ত্র এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা একত্রিত করে কার্যকরভাবে কাজ করানো সহজ নয়।” তাঁর মতে, জাহাজটি পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও এক বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।
অর্থনৈতিক ও পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতা কিম বিয়াং-কি প্রশ্ন তুলেছেন, “উত্তর কোরিয়া কি সত্যিই এত বড় একটি যুদ্ধজাহাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ও অবকাঠামো জোগাড় করতে পারবে?” এছাড়া, কেবল যুদ্ধজাহাজ নয়—এই জাহাজ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত নাবিক দল, সহায়ক জাহাজ এবং রক্ষণাবেক্ষণের পরিকাঠামোও দরকার।
নতুন হুমকি: হাইপারসোনিক মিসাইল
অবসরপ্রাপ্ত দক্ষিণ কোরীয় অ্যাডমিরাল কিম সতর্ক করে বলেন, “উত্তর কোরিয়া যদি এই ফ্রিগেটটিতে হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল সংযোজন করে, তাহলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীর সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীতে প্রায় ৪০০টি পেট্রোল কমব্যাট্যান্ট এবং ৭০টি সাবমেরিন রয়েছে, যার বেশিরভাগই পুরনো ও প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে। মাত্র দুটি নাজিন-শ্রেণির ফ্রিগেট রয়েছে, যা ১৯৭০-এর দশকের পুরনো মডেল।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম জং উন তার নৌবাহিনী আধুনিকীকরণের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এর আগেই উত্তর কোরিয়া একটি পারমাণবিক সাবমেরিন উন্মোচন করেছে, যা ১০টি মিসাইল বহনে সক্ষম। পাশাপাশি সিনপো ও চংজিনে আরও নতুন সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ চলমান।
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
উত্তর কোরিয়ার এই নতুন উদ্যোগকে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং কৌশলগত বার্তা হিসেবেও দেখছেন বিশ্লেষকরা। নতুন যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের মাধ্যমে কিম প্রশাসন স্পষ্টভাবে চাচ্ছে আঞ্চলিক আধিপত্যে নিজের অবস্থান শক্ত করতে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই যুদ্ধজাহাজ সফলভাবে সজ্জিত ও কার্যকর হয়, তবে তা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা, আন্তর্জাতিক কৌশলগত গবেষণা ইনস্টিটিউট।