

দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কারের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। সোমবার সকাল ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করা প্রতিবেদনে কমিশন একাধিক মৌলিক পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সুপারিশ হচ্ছে, এখন থেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর সরাসরি চিকিৎসকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। তাদেরকে ই-মেইলের মাধ্যমে ওষুধ সংক্রান্ত তথ্য চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে একটি পৃথক ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে, যা নাগরিকদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার এবং রাষ্ট্রের কর্তব্য নির্ধারণ করবে। এটি স্বাস্থ্যখাতে দীর্ঘমেয়াদে ন্যায্যতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।
কমিশন ৭টি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন
- বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন
- প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন
- ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন
- অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কমিশনার আইন
- বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কমিশনার আইন
স্বতন্ত্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে দিতে হবে, যাতে কোনও নাগরিক অর্থনৈতিক কারণে এই সেবা থেকে বঞ্চিত না হন। উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার এবং জেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা চালুর মাধ্যমে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিশ্বমানের টারশিয়ারি সেবা হাসপাতাল স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে স্থানীয়ভাবে জটিল চিকিৎসা সম্ভব হয় এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ কমে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যের স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনে বিশিষ্ট চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।