

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা আবারও চরমে পৌঁছেছে। দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এমন উত্তপ্ত অবস্থানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগও বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানালেও ভারত, বরং ‘সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে’ বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দিল্লিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সহায়তা নয়, বরং সামরিক হামলার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতেই নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বেশ কয়েকজন কূটনৈতিক।
সীমান্তে টানা গোলাগুলি, পারমাণবিক হুঁশিয়ারি
কাশ্মীর সীমান্তে ইতোমধ্যে টানা চার রাত ধরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। রবিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের ‘বিনা উসকানিতে’ গুলিবর্ষণের জবাবে ভারত পাল্টা গুলি চালিয়েছে বলে জানায় দিল্লি। অন্যদিকে পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের ১৩০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ভারত আক্রমণের জন্য প্রস্তুত। ভারতের ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’ এবং পাকিস্তানের ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ কৌশলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, যেখানে সামান্য উত্তেজনাও পরমাণু সংঘাতে পরিণত হতে পারে।
তথ্যযুদ্ধ এবং সেনা অভিযানের প্রস্তুতি
ভারত সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে এবং বিবিসিকে সতর্ক করেছে। একইসঙ্গে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। তল্লাশি অভিযানে ৫০০ জনকে আটক এবং নয়জন সন্দেহভাজনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বৈশ্বিক চাপের চিত্র
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়েই সংযমের আহ্বান জানালেও কার্যত তারা বর্তমানে ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে ব্যস্ত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে দুই দেশের বন্ধু দাবি করলেও তাঁর প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয়া নীতির অগ্রাধিকার কম। ভারতের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে তারা আন্তর্জাতিক চাপের তোয়াক্কা কম করছে বলে নিউইয়র্ক টাইমস বিশ্লেষণ করেছে।
সংঘাত নাকি সমঝোতা?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোদি সরকারের ওপর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘কিছু একটা করার’ চাপ রয়েছে, বিশেষত ২০১৬ ও ২০১৯ সালের মতো প্রত্যুত্তরের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে। অন্যদিকে পাকিস্তানও পাল্টা জবাবের হুমকি দিয়ে রেখেছে। এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সমঝোতা না হলে দক্ষিণ এশিয়া দ্রুত আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।