

ভারতের কেরালার ত্রিভানদ্রম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে তিন সপ্তাহ আটকে থাকার পর অবশেষে হ্যাংারে সরানো হয়েছে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর এফ-৩৫বি (F-35B) স্টেলথ যুদ্ধবিমানটি। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি ওই অবস্থায় পড়ে ছিল, যার ফলে এটি নিয়ে উদ্বেগ এবং আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিমানটিকে কীভাবে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়, সেই নিয়ে এখন মূল্যায়ন চলছে। সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিশাল সামরিক পরিবহন বিমান সি-১৭ গ্লোবমাস্টারের কথা ভাবা হচ্ছে। এর পাশাপাশি নতুন করে একটি প্রকৌশল দল এয়ারবাস এ-৪০০এম মালবাহী উড়োজাহাজে করে কেরালায় এসে পৌঁছেছে। তারা নির্ধারণ করবে, বিমানটি স্থানীয়ভাবে মেরামত করা যাবে কি না, নাকি সেটিকে খণ্ড খণ্ড করে ফিরিয়ে নিতে হবে।
যেহেতু এফ-৩৫বি একটি স্টেলথ প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান এবং এর ডিজাইন ও প্রযুক্তি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই এ সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নেওয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। প্রতিটি যন্ত্রাংশ, এমনকি স্ক্রু পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোডে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিমানটির অপসারণ, পরিবহন এবং নজরদারির প্রতিটি ধাপই নথিভুক্ত করা হচ্ছে যেন সামরিক গোপনীয়তা কোনোভাবেই ঝুঁকিতে না পড়ে।
প্রসঙ্গত, এফ-৩৫বি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল যুদ্ধবিমানগুলোর একটি, যার প্রতি ইউনিটের দাম ১১ কোটি ডলারেরও বেশি। এর উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ মিলিয়ে খরচ করেছে বিপুল অর্থ ও সময়। ২০১৯ সালে একবার এই মডেলের একটি বিমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে সি-১৭ বিমানে করে ইউটাহতে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যা ছিল দেড় লাখ ডলারের একটি সুপরিকল্পিত লজিস্টিক অপারেশন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, বিমানটি মেরামত করেই হোক কিংবা খণ্ড করে ফিরিয়ে দিয়েই হোক—প্রত্যেক ধাপে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হবে। ভারতের প্রতিরক্ষা সূত্রেও নিশ্চিত করা হয়েছে, এ নিয়ে যৌথভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক ও নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্য গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে।
এখন কেরালার আকাশে চোখ রাখছে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা মহল—কোন পথে ফিরবে বিশ্বের অন্যতম গোপন প্রযুক্তির এই যুদ্ধবিমান