

মোঃ শিহাব উদ্দিন, গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী গ্রামের মাসুম শেখ জন্ম থেকেই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। বয়স মাত্র ৩০ বছর। ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর মাকে নিয়ে শুরু হয় তার জীবনের কঠিন সংগ্রাম। বিয়ের পর সংসারে সদস্য সংখ্যা বাড়লেও থেমে থাকেনি জীবনের যুদ্ধ। চার বছর আগে একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটোভ্যান কিনেছিলেন মাসুম শেখ। সেই ভ্যান চালিয়েই সংসারের খরচ চালাতেন, দেখতেন মা ও স্ত্রীর মুখ।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত ৩১ জুলাই রাতে চুরি হয়ে যায় সেই উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম—অটোভ্যানটি। এরপর শুরু হয় আরেক দুঃসহ অধ্যায়। সাহায্যের আশায় ঘুরেছেন অনেকের দুয়ারে, কিন্তু মেলেনি কোনো সহানুভূতি। হঠাৎ করেই যেন থেমে যায় তার স্বপ্ন ও সংগ্রামের পথচলা।
তবে এমন এক দুঃসময়ে আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ান টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার। কুশলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসতিয়াক হোসেনের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি দ্রুত মাসুমের বাড়িতে ছুটে যান। কথা বলেন, সান্ত্বনা দেন, আশ্বাস দেন সহায়তার।
পরদিনই ইউএনও ফারজানা আক্তার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রকাশ চক্রবর্তীকে মাসুম শেখের জন্য ভ্যান কেনার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ৬ আগস্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাসুমকে ২০ হাজার টাকার একটি চেক হস্তান্তর করা হয়।
এ সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত মাসুমের পরিবার। মাসুমের মা আবেজান বেগম চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “আমার প্রতিবন্ধী ছেলে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো। ভ্যানটি চুরি যাওয়ার পর অনেকের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। পরে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ইউএনও ম্যাডাম আমাদের পাশে দাঁড়ান। তিনি যেন আলোর এক দিশারি।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, “বিষয়টি জানতে পেরে আমি সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু পেরেছি, করেছি। ভবিষ্যতেও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন অসহায় মানুষের পাশে থাকবে।”
এই মানবিক সহায়তা এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারা বলছেন, প্রশাসনের এমন উদ্যোগ বাস্তবেই সমাজের দুর্বল মানুষদের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে পারে।