গোপালগঞ্জে চলমান রয়েছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে প্রকাশ্যে বালু কাটা হচ্ছে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলনের উৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে একাধিক আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে শ্রমিকরা কথা বলতে এড়িয়ে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, যেসব চক্র আগে বালু কাটতেন, এখনো তারাই কাটছেন। শুধু প্রকাশ্যে না থেকে থেকে আড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন পুরো প্রক্রিয়া।
স্থানীয় ভাষায়, জমির নিচ থেকে বালু তুলে আনার যন্ত্রকে বলা হয় ‘আত্মঘাতী’ ড্রেজার, আর নদী বা খালের নিচ থেকে বালু তুলতে ব্যবহৃত যন্ত্রকে বলা হয় ‘লোড’ বা ‘আনলোড’।
একাধিক সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ সদর, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানীসহ জেলার নিচু এলাকাগুলোতে প্রায় ৪ শতাধিক ড্রেজার মেশিন সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই প্রকাশ্যে এবং কেউ কেউ গোপনে বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ প্রশাসনের নজরে পড়লে জরিমানা দিচ্ছেন, আবার অনেকেই প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন বালু ব্যবসা।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক উন্নয়নকর্মী বলেন, “মাটির নিচ থেকে বালু তুলতে তুলতে গোপালগঞ্জের অবস্থা এখন ‘ওপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট’। এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে আছি, তার ওপর ভূপৃষ্ঠের স্থায়িত্ব নষ্ট করলে পরিবেশগত বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।”
উল্লেখ্য, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী, ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইনটির ৫(১) ধারা অনুযায়ী, পাম্প, ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে মাটির নিচের বালু তোলা যাবে না। একই আইনের ৪(খ) ধারা অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, সড়ক, রেললাইন বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসিক এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই আইন অমান্য করলে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron