

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পলায়নের পর গত বছরের আগস্টে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ নানা দিক থেকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিতে তার সরকার চেষ্টা করছে।
প্রশাসনিক ও শিক্ষা খাতে অস্থিরতা
সম্প্রতি জারি করা একটি অধ্যাদেশ সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। অধ্যাদেশটি প্রশাসনকে কোনো তদন্ত বা দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার সুযোগ দিয়েছে। এতে কর্মকর্তারা দমনমূলক হিসেবে দেখছেন। এর প্রতিবাদে টানা বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা।
অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শিক্ষা ও প্রশাসনিক খাতের একযোগে আন্দোলনে সরকারের ওপর চাপ বেড়েছে।
রাজস্ব বোর্ড সংকট ও প্রত্যাহার
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি বিভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেও এনবিআর কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে সরকার তা দ্রুত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এর পরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরত কর্মীরা। তবে তা সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকারিতার ওপর বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সেনাবাহিনীর অবস্থান
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপ এখনও কোনো সুস্পষ্ট রূপরেখা আনতে পারেনি। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ভোট আয়োজন সম্ভব। এ প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে।
এদিকে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার সাম্প্রতিক এক ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। সেনাবাহিনীর এমন অবস্থান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
ইউনূসের প্রতিশ্রুতি ও বৈঠকসমূহ
অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনার গুঞ্জন থাকলেও তার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, তারা এখনও দায়িত্বে বহাল আছেন এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন।
শনিবার একটি জরুরি উপদেষ্টা সভা শেষে অধ্যাপক ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং অন্যান্য দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই আলোচনায় রাজনৈতিক ঐকমত্যের জন্য কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, শঙ্কা আরও গভীর
সাবেক শাসকদল আওয়ামী লীগের নিবন্ধন চলতি মাসে স্থগিত করা হয়েছে, যার ফলে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে রাজনৈতিক ভারসাম্য আরও বিপর্যস্ত হয়েছে এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির শঙ্কা বেড়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, “আমরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো সময় পার করছি। দেশকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টায় কিছু গোষ্ঠী নানাভাবে অস্থিরতা তৈরি করছে।”