চিকিৎসকদের নিজেদের দায়বদ্ধতা, সৃজনশীলতা ও মননশীলতা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো আয়োজিত সিভিল সার্জন সম্মেলন ২০২৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “স্বাস্থ্যসেবা যে স্বাস্থ্যহীন, সেটা আমরা সবাই বুঝি। একে অপরকে দোষ দিলে এই স্বাস্থ্যহীনতা দূর হবে না। আমাদের নিজেদের কাছে প্রশ্ন করতে হবে—কেন আমরা পারছি না, কী গাফিলতি রয়েছে। প্রতিকারের পথে এগোতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের হাতে যে সুযোগ-সুবিধা ও সরঞ্জাম আছে, তা দিয়েই যদি আমরা সচেতনভাবে কাজ করি, তাহলে অন্তত ২৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি সম্ভব।”
সিভিল সার্জনদের দাবি
সম্মেলনে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. জিল্লুর রহমান চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সুবিধা নিশ্চিতে একাধিক দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, “প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন। হাসপাতালগুলোতে আনসার বা স্বাস্থ্যপুলিশ মোতায়েন করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন জেলায় সিভিল সার্জনের নিজস্ব অফিস ও বাসভবন নেই, যা প্রশাসনিক কাজকর্মে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি, অবৈধ ক্লিনিক, ভুয়া চিকিৎসক ও দালাল নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জনদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।”
সিভিল সার্জনদের ক্যারিয়ার অগ্রগতি নিয়েও তিনি উদ্বেগ জানান, “প্রায় ৩৭ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে গ্রেড-১ পদ মাত্র দুটি। তাই ক্যাডার কর্মকর্তা পদ সংস্কার এবং উচ্চপদ সৃষ্টি সময়ের দাবি।”
সরকারপক্ষের আশ্বাস
সম্মেলনে উপস্থিত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, “৭ হাজার সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে চিকিৎসকদের প্রমোশন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। একইসঙ্গে নতুন করে নার্স নিয়োগের পরিকল্পনাও রয়েছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. সাইয়েদুর রহমান বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে প্রমোশন, বাজেট, পদায়ন এবং ওষুধ সরবরাহের ঘাটতি দূর করতে পারলে বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব। এজন্য ইউনিক হেলথ কার্ড চালুর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।”
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রস্তাব
একই দিন তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার ইন্দিরা রানার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়ার সমন্বিত অর্থনৈতিক কৌশল গঠনের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে জলবিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা ও সড়কসংযোগে পারস্পরিক সহযোগিতা গড়ে তোলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে রংপুরে নির্মাণাধীন ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের রোগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”
তিনি আঞ্চলিক স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ও যৌথ সমৃদ্ধির প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron