সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে ঘুষ লেনদেন ও দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের কার্যক্রমে অর্থ লেনদেনের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় ৮৬টি প্রকল্পে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বেশি, টিআর প্রকল্পে ৯৭টি কার্যক্রমে ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং কাবিখায় ৪৪টি প্রকল্পে ২২৫ মেট্রিক টনের বেশি চাল ও গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। মোট ১৩টি ইউনিয়নে এসব প্রকল্প চলমান রয়েছে।

স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং এলাকাবাসীরা অভিযোগ করছেন, প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ছাড়ের ক্ষেত্রে নিয়মমাফিক কাজ করলেও পিআইও অফিসে ঘুষ ছাড়া বিল পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, প্রতি লাখ টাকার প্রকল্পে গড়ে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এই প্রক্রিয়ায় অফিস সহকারী নাজমুলের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের ঘুষ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

একাধিক সূত্র জানায়, পিআইও অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান এবং সাবেক পিআইও কে এম মাহবুর রহমানের মধ্যে ঘুষের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে, যার ফলে অফিসের সামনে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকরা অফিসে গেলে কর্মচারীরা ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে, সরকার পরিবর্তনের পরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বপদে থেকে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পুনরায় আলোচনায় এসেছেন। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই বিল উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে একাধিক প্রকল্পে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফাইল নড়াচড়ার জন্য ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ দাবি করা হয়।

এছাড়া, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, সড়ক-মহাসড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের বড় অংশ যথাযথভাবে ব্যবহার না করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অফিস সহকারী নাজমুল স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, উপরের নির্দেশেই তিনি কাজ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে লুৎফুর রহমান ও মাহবুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা সাড়া দেননি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।