

টানা তিন দিনের কঠোর আন্দোলন, অবস্থান কর্মসূচি ও গণ-অনশনের পর অবশেষে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে নতি স্বীকার করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সরকারের পক্ষে দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে গিয়ে উপাচার্য জানান, সরকারের পক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের চাহিদা অনুযায়ী আবাসন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের লক্ষ্যে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।
ইউজিসি ও প্রশাসনের আশ্বাস
উপাচার্যের সঙ্গে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ, যিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় আমরা সব সময় প্রস্তুত। জবির দাবিগুলোর যৌক্তিকতা রয়েছে। একটি পরিবার হিসেবে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে বসে এর স্থায়ী সমাধান করবে।”
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ লিখিত নিশ্চয়তা না আসা পর্যন্ত অনশন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
আন্দোলনের পটভূমি ও তিন দফা দাবি
গত বুধবার (১৪ মে) দুপুরে আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশে ‘লংমার্চ’ শুরু করেন। গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, সচিবালয়, হাইকোর্ট চত্বর ও মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছান। পরে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাতভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদদীনের আহ্বানে পরদিন বৃহস্পতিবার আরও বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দুপুরের পর আন্দোলনকারীরা অনশন শুরু করেন।
তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে ছিল—
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু,
- প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট অনুমোদন এবং তা থেকে কোনো কাটছাঁট না করা,
- দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্প দ্রুত একনেক সভায় অনুমোদন ও বাস্তবায়ন।
সরকারি হস্তক্ষেপ ও বিতর্কিত পরিস্থিতি
দাবি মানার আগের দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় যান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। কিন্তু সেখানে তাকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানে স্বাগত জানানো হয় এবং এক পর্যায়ে বোতল ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান এবং কিছু সময় পর পুলিশের অবস্থানকে শিক্ষার্থীদের ‘অপকর্ম’ বৈধতা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা হয় এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা আসে।
শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের জয়গান
উপাচার্যের ঘোষণার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেন। তবে অনেকেই লিখিত আদেশ না আসা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যান। একপর্যায়ে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও কিছু শিক্ষার্থী কাকরাইল মোড়ে থেকে যান, যা আন্দোলনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতিশীল মনোভাবের প্রকাশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশের হামলার ঘটনায় সাত দিনের মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মিলেছে এবং পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে।