জাতীয় স্বার্থ অগ্রাধিকার দিলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

print news
img

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তখনই সম্ভব, যখন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থের জায়গায় জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই গণহত্যার বিচার আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের সূচনা ও আয়োজন

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের। জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং দোয়া-মোনাজাত পরিচালনা করেন যুগ্ম সচিব রুহুল আমিন। পরে ‘ট্রায়াল অব জুলাই কার্নেজ’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

ন্যায্য বিচার ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের আহ্বান

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায্য সুরক্ষা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং তা নিশ্চিত করা হবে। তবে শুধুমাত্র বিচার প্রক্রিয়া যথেষ্ট নয়—রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হলে সবার দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি অপরাধের বিচার না হয়, তাহলে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। এজন্য নির্ধারিত আইনি প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও পালিয়ে যাওয়া খুনিরা

উপদেষ্টা জানান, জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অনেক নির্দেশদাতা ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রমাণ। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তারা কীভাবে দেশ ছাড়ল? আমরা কীভাবে তাদের উপস্থিত রাখতে ব্যর্থ হলাম?”
তিনি বলেন, অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচার হবে বটে, কিন্তু এতে তারা সত্যিকার অর্থে বিচারের মুখোমুখি হবে না। ফলে বেশিরভাগই শাস্তির বাইরে থেকে যাবে, যা মেনে নেওয়া যায় না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মনে করেন, যখন কোনো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, তখন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তাই ধারাবাহিক সচেতনতা ও পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার-বাণিজ্য ও মামলা-বাণিজ্য থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি। এজন্য রাজনৈতিক নেতাদের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

চিফ প্রসিকিউটরের আশ্বাস

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের একটি বড় অংশের বিচার এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। তিনি জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় আগামী ৩ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *