জামায়াতের নিবন্ধন বৈধ: হাইকোর্টের রায় বাতিল করল আপিল বিভাগ

print news
img

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রবিবার (১ জুন) দলটির পক্ষে করা আপিল গ্রহণ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের ফলে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া জামায়াতের নিবন্ধন আবারও বৈধ বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছেন দলটির আইনজীবীরা। তবে জামায়াতের আগের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ব্যবহার করতে পারবে কি না— সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি), জানিয়েছে আপিল বিভাগ।

দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর সিদ্ধান্ত

২০০৯ সালে জামায়াতের নিবন্ধন চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফসহ ২৫ জন। তারা অভিযোগ করেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্র ও রাজনৈতিক কার্যক্রম সংবিধানবিরোধী।

হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। আদালত বলেন, নিবন্ধন দেওয়া ছিল আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় আপিল বিভাগ তাদের আবেদন খারিজ করে দেয়। পরে পুনরুজ্জীবনের জন্য আবেদন করলে ২০২৪ সালের অক্টোবরে আদালত শুনানির অনুমতি দেয়।

এ সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় পরিবর্তন ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার আগে ১ আগস্ট সরকার জামায়াতে ইসলামীর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।

তবে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জামায়াতের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয় ২৮ আগস্ট। এর পরপরই দলটি নিবন্ধনের মামলাটি পুনরুজ্জীবনের জন্য পুনরায় আবেদন করে এবং অবশেষে ১ জুন ২০২৫ আপিল বিভাগ তাদের নিবন্ধন বৈধ বলে ঘোষণা দেয়।

আইনজীবীদের বক্তব্য

জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও মো. শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা বলেন, “আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ এক যুগের আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। এখন নির্বাচন কমিশনের ওপর দায়িত্ব বর্তায়, জামায়াতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *