‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় শেখ হাসিনা প্রধান অভিযুক্ত: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল

print news
img

২০২৪ সালের ‘জুলাই গণহত্যা’ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল মামুন।

রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ গৃহীত হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সারা দেশে চালানো গণহত্যার প্রধান নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা। অভিযোগপত্রে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হত্যার জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়েছে।

এর আগে গত ১২ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে জুলাই গণহত্যার “মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা” হিসেবে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ ও শুনানি প্রক্রিয়া
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ২০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশনের সময় আবেদন বিবেচনায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ উত্থাপনের সময় বলেন, “শুধু রাজনীতি নয়, এটা গণমানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ—যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।”

পূর্বের নির্দেশনা ও প্রেক্ষাপট
এরও আগে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর, একই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ মোট ৪৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলায় তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণহত্যা
২০২৪ সালের জুন-জুলাই মাসে শুরু হয় দেশের সর্ববৃহৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-জনতা সংবিধানসম্মত দাবিতে রাস্তায় নামেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচার গুলিবর্ষণ চালায়। এই গণহত্যায় প্রাণ হারায় আনুমানিক ১,৫০০ নিরস্ত্র মানুষ, যাদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, স্কুলপড়ুয়া কিশোর, নারী, শ্রমিক ও সাধারণ পথচারী।

চলমান বিচার ও সম্ভাব্য দণ্ড

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে শুনানি শুরু করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণহত্যা প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *