টঙ্গীতে জ্বীনের কথায় দুই সন্তানকে খুন করলেন মা, আদালতে স্বীকারোক্তি

print news

গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি ||

img

গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরে মায়ের হাতে খুন হয়েছে নিজ দুই শিশু সন্তান। ঘৃণ্য এ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী মা সালেহা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে থাকা জ্বীন আমাকে ওদের (সন্তানদের) মেরে ফেলতে বলেছিল, তবেই আমার মঙ্গল হবে।”

গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর রূপবানেরমার টেক এলাকার একটি আটতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাট থেকে শিশু মালিহা আক্তার (৬) ও আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (৪)-এর নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

জ্বীনের প্ররোচনায় নির্মম খুন

আদালতে সালেহা বলেন, “জ্বীন আমার সামনে এসে বলল, সন্তানদের মেরে ফেললে আমার মঙ্গল হবে। বারবার বলার পর আমি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ঘরের বঁটি দিয়ে প্রথমে মেয়েকে, পরে ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করি। জ্ঞান ফিরে আসার পর বুঝতে পারি, আমি ভয়ানক ভুল করে ফেলেছি।”

পুলিশি তদন্ত ও আদালতের আদেশ

ঘটনার পর আটক সালেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তিনি আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করে লিখিত জবানবন্দি দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টঙ্গী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল রুমান বলেন, “সালেহা আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি বঁটি দিয়ে নিজ সন্তানদের কুপিয়ে হত্যা করেন।” আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।

ভেঙে পড়েছেন সন্তানদের বাবা

নিহত আব্দুল্লাহ ও মালিহা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার তাতোয়াকান্দি গ্রামের আ. বাতেনের সন্তান। নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়। সন্তানদের দাফনের পর রাতে কবরস্থানে গিয়ে একা বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন শোকার্ত বাবা বাতেন।

চাচা আরমান বলেন, “দাফনের পর রাত ১২টার দিকে কবরস্থানে গিয়ে বসে ছিল বাতেন ভাই। এখন আর ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। সে যেন পাগল হয়ে গেছে।”

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া বড় বোন বর্ষা

হত্যাকাণ্ডের সময় বড় মেয়ে বর্ষা (৯) তার বড় চাচা আরমানের বাসায় ছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বর্ষা স্থানীয় একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

হত্যার পর বাবা দায়ের করেন মামলা

এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর নিহতদের বাবা বাতেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে মর্মস্পর্শী এ সত্য— সন্তানদের খুন করেছেন তাদের জন্মদাত্রী মা-ই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *