

মেয়র পদে বসার সুযোগ থাকছে না ইশরাক হোসেনের, দাবি বিশ্লেষকদের—বিপরীতে শপথের দাবি তুলছেন আইনজীবীরা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দ্বিতীয় পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী, প্রথম সাধারণ সভার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব পালন করবেন। সে হিসাবে আজই শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান পর্ষদের কার্যকাল।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন আইনি জটিলতা। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাঁকে বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও এখনো তাঁর শপথগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলিম বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আর কোনো শূন্য পদে কেউ দায়িত্ব নিতে পারবেন না। সব মিলিয়ে একটি লেজেগোবরে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।”
নগর পরিকল্পনা ও নীতিগত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “যেহেতু এই পর্ষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই ইশরাক হোসেনের আর মেয়র হিসেবে বসার সুযোগ নেই। নতুন নির্বাচন ছাড়া এই শূন্যতা পূরণ সম্ভব নয়।”
আইনজীবীদের ভিন্ন মত
বিপরীতে, ইশরাক হোসেনের আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “স্থানীয় সরকার আইনে ‘বিশেষ পরিস্থিতি’ নামে একটি ধারা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে সেই বিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেহেতু নতুন নির্বাচন এখনো হয়নি, তাই ইশরাক শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা এখনো সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পূর্ণ অনুলিপি পাইনি। আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
আইনি প্রেক্ষাপট
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ (সংশোধিত)–এর ৪৯(১) ধারায় বলা হয়েছে, মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রথম সভার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী পাঁচ বছর হবে তাঁদের দায়িত্ব পালনের সময়সীমা।
১৬ ধারায় বলা আছে, মেয়রের পদ হঠাৎ শূন্য হলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে এবং যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনি পূর্ববর্তী মেয়াদে অবশিষ্ট সময়টুকু দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে, ইশরাকের ক্ষেত্রে এই সময়কাল ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে বিশেষ পরিস্থিতির ধারার কথা উঠলেও তা প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি।
এছাড়া আইনটির ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশনের মেয়াদ শেষে প্রয়োজনে একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া যাবে, যিনি হতে পারেন কোনো উপযুক্ত ব্যক্তি বা সরকারী কর্মকর্তা।