

‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা রূপ নেয় এক খণ্ড ফিলিস্তিনে। গতকাল সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে। “তুমি কে, আমি কে – ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন” এই স্লোগানে মুখর ছিল রাজধানীর রাজপথ। লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মানুষের হাতে ছিল ফিলিস্তিন ও বাংলাদেশের পতাকা, মাথায় ছিল কেফিয়াহ, অনেকের হাতে ছিল প্রতীকী রক্তাক্ত মৃত শিশুর লাশ।
মানুষকে বিনামূল্যে পানি ও লেবুর শরবত সরবরাহ করতে দেখা গেছে অনেককে। রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সাধারণ নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’, ‘গাজা রক্তে রঞ্জিত, বিশ্ব কেন নীরব’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’।
তপ্ত রোদে অংশগ্রহণকারীরা হ্যান্ডমাইক কিংবা খালি গলায় স্লোগান দেন: “নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার”, “ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন”, “নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে”। আশপাশের রাস্তাগুলো ছিল উপচে পড়া জনতার দখলে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল এসে যোগ দেয় মূল জমায়েতে, যার ফলে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত কর্মসূচি শুরু হয় বিকাল ৩টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে, তেলাওয়াত করেন কারি আহমদ বিন ইউসুফ। এরপর একে একে বক্তব্য দেন দেশের খ্যাতনামা আলেম, রাজনৈতিক নেতারা ও বিশিষ্টজনেরা।
আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, “স্বাধীন ফিলিস্তিন সেখানকার মানুষের অধিকার। আজ আমরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি।” ইসলামিক স্কলার ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, “আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করে, আমাদের হৃদয়ে ফিলিস্তিন বেঁচে আছে।”
বিকাল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় মোনাজাত, পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। মোনাজাতে অংশগ্রহণকারীদের চোখে ছিল অশ্রু, ফিলিস্তিনের শিশু ও নারীদের জন্য প্রার্থনায় অংশ নেন সবাই।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি ফয়জুল করীম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, শায়খ আহমাদুল্লাহ, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি বাংলাদেশের মাটিতে ফিলিস্তিনের প্রতি এক গভীর সংহতি ও বিশ্বজনমত তৈরির স্মরণীয় উদাহরণ হয়ে থাকল।