ঢাবি ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা: তিনজন গ্রেপ্তার, উত্তাল ক্যাম্পাস

print news
img

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শাহবাগ থানা পুলিশের অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বুধবার (১৪ মে) ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

হামলা ও মৃত্যু

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় সাম্য ছুরিকাঘাতের শিকার হন। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুদের সহায়তায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, সাম্যর ডান উরুতে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা।

কে ছিলেন সাম্য?

সাম্য (২৫) ছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং স্যার এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা এই শিক্ষার্থী হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

ধাক্কা থেকে মৃত্যু: বন্ধুদের ভাষ্য

সাম্যের দুই বন্ধু রাফি ও আবাবিল জানান, একটি বাইকের সঙ্গে সাম্যর বাইকের ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। পরে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে অপর পক্ষ সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

রাতেই প্রতিবাদ, উত্তাল ক্যাম্পাস

সাম্যের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাতেই ঢাকা মেডিকেলে জড়ো হন ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকেই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে স্যার এফ রহমান হল এবং ভিসি চত্বরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকে:

“আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে”,
“অথর্ব ভিসি মানি না, মানব না”,
“বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই”।

ভিসিকে ঘিরে বিক্ষোভ, ঢুকতে বাধা

রাত দেড়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টরসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা হাসপাতালে পৌঁছান। তবে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে তারা নিহত শিক্ষার্থীর কাছে যেতে পারেননি। পরে পরিস্থিতি খারাপ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা সেখান ত্যাগ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিবৃতি

ঢাবি জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়,

“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে এবং নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

দ্রুত বিচার না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে: সহপাঠীরা

শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, সাম্য হত্যার দ্রুত বিচার ও প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে ক্যাম্পাসে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *