

রাজধানীর কাকরাইলে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনায় তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, সমালোচনা গণতান্ত্রিক অধিকার, কিন্তু শারীরিক লাঞ্ছনা বর্বরতা। মাহফুজ আলমের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার চেয়ে নিকৃষ্ট আর কিছু হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ফেসবুকে লিখেছেন, “মাহফুজ আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানাই, সঙ্গে যারা এতে উল্লাস করেছে, তাদেরও নিন্দা জানাই। হামলাকারী কী উদ্দেশ্যে হামলা করেছে, তা তদন্ত করে বের করা দরকার। দোষীকে আইনের আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত।”
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “মাহফুজ আলম শিক্ষা উপদেষ্টা নন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিসমূহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউও নন। তিনি একজন ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁকেই লাঞ্ছনার শিকার হতে হলো। আন্দোলনের দায় শিক্ষাসচিবের হলেও, যিনি কথা শুনতে গিয়েছেন, তাঁকেই লক্ষ্য করা হলো—এটা দুঃখজনক।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি যোগাযোগ করলে মাহফুজ আলম তৎক্ষণাৎ সময় দেন এবং পরদিন শিক্ষাসচিব ও প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নেন। তা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীদের এমন আচরণ হতাশাজনক বলেও মন্তব্য করেন সারজিস।
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “একজন রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে মাহফুজ আলম সমস্যা সমাধানে গিয়েছিলেন। তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ধরনের উগ্র আচরণ ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আন্দোলনের নেতৃত্বের উচিত প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করা এবং এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দূর করা।”
তিনি আরও লেখেন, “সমালোচনা করা অধিকার, কিন্তু শারীরিক আক্রমণ বর্বরতা। পাশাপাশি, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতাও চোখে পড়ছে। ছাত্র উপদেষ্টাদের সামনে ঠেলে দিয়ে মূল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ লিখেছেন, “মতভেদ থাকতে পারে, কিন্তু মাহফুজ আলম আমাদের ভাই। তাঁর সম্মানে আঘাত করা অনুচিত।” এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায় বলেন, “যেভাবে বোতল ছুড়ে মারা হয়েছে, তা দুঃখজনক। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোও উপেক্ষিত ছিল। আমি বিশ্বাস করি, সাধারণ কোনো শিক্ষার্থী এমন কাজ করেনি। অন্তর্ঘাতমূলক মনোভাব থেকেই হয়তো এমন ঘটনা ঘটেছে।”
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেছেন, “হামলাকারীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।” একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদারসহ এনসিপির আরও অনেক নেতা এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কাকরাইল মসজিদের সামনে যান। সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা বলার এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল ছুড়ে মারা হয়। এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।