দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা, অথচ প্রতিটি তামাকজাত পণ্যে স্পষ্ট লেখা রয়েছে—‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’। বাস্তবতার এই বৈপরীত্য দূর করতে এবং তামাকবিরোধী আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় “তামাকবিরোধী সেমিনার ২০২৫”।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার হোসেন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জিয়া আহমেদ সুমন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোঃ আশরাফুল ইসলাম, যেখানে তিনি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০২৫ (সংশোধিত ২০১৩) সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আলোচনায় উঠে আসে, পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক সেবন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রথমবারে ৩০০ টাকা এবং পরবর্তীতে দ্বিগুণ জরিমানার বিধান থাকলেও বাস্তবায়নের অভাবে সচেতনতা গড়ে উঠছে না। একাধিক আলোচক জরিমানার পাশাপাশি দণ্ডের বিধান কার্যকর করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের আশপাশে তামাকজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা ছাত্র-ছাত্রীদের নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা বন্ধ করা জরুরি।
সেমিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ইনজেকশন বিক্রি বন্ধ না করলে তরুণরা সহজেই নেশায় জড়িয়ে পড়বে। একইসঙ্গে খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ বাড়িয়ে যুবসমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তার বক্তব্যে জানান, ঘুমের ওষুধসহ কিছু শিডিউলভুক্ত ওষুধ ও ই-সিগারেট বর্তমানে নেশাজাত দ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা তরুণদের জন্য ভয়াবহ হুমকি। তিনি বলেন, এসব নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগের কোনো বিকল্প নেই।
ডিআইজি ময়মনসিংহ রেঞ্জের প্রতিনিধি পুলিশ সুপার ফাল্গুনী নন্দী প্রস্তাব দেন, চাকরির পরীক্ষায় যেভাবে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক, তেমনি ‘তামাক টেস্ট’ চালুর চিন্তা করা উচিত। তিনি আরও বলেন, জুমার খুতবায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচার কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার বক্তব্যে বলেন, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে—ধূমপানের কোনও উপকারিতা নেই বরং এটি ব্যক্তি, পরিবার এবং জাতির জন্য বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ। স্থানীয় সরকার আইনের আওতায় লাইসেন্সবিহীন ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের মাধ্যমে মাদক বিক্রি নিষিদ্ধ করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোখতার হোসেন বলেন, জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট ও স্থানীয় সরকারের লাইসেন্স এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, “সমাজে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করে এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি দায়বদ্ধতা তৈরি করেই আমরা মানুষকে তামাকমুক্ত জীবনের পথে আনতে পারি।”
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। সকলেই তামাক ও মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron