দীর্ঘ এক দশক পর চূড়ান্ত হলো বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের (বিবিআইএন) মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী মোটরযান চলাচলের প্রটোকল। ২০১৫ সালে মোটরযান চুক্তি (এমভিএ) স্বাক্ষরের পর থেকে এ নিয়ে নানা আলোচনার পর অবশেষে এই চূড়ান্ত প্রটোকল দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃসংযোগ বৃদ্ধির একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু মোটরযান চলাচলই নয়, বিবিআইএন দেশগুলো আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তঃসংযুক্ত বিদ্যুৎ গ্রিড গঠনের দিকেও নজর দিচ্ছে।
বিবিআইএন-এমভিএর মূল লক্ষ্য হচ্ছে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য ও যাত্রী চলাচলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ও বিধিনিষেধ দূর করে একটি গতিশীল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
চূড়ান্ত প্রটোকল অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল সব ধরনের যানবাহনের চলাচলের অনুমতি দেবে, যদিও ভুটান এখনো ট্রায়াল রানে অংশ নেয়নি। পণ্যবাহী যানকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে— হালকা (৭,৫০০ কেজি পর্যন্ত), মাঝারি (৭,৫০০–১২,০০০ কেজি) এবং ভারী (১২,০০০ কেজির বেশি)।
২০১৫–২০১৮ সালের মধ্যে এই প্রটোকলের কার্যকারিতা যাচাইয়ে বিভিন্ন ট্রায়াল রান পরিচালনা করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুটগুলো ছিল কলকাতা–ঢাকা–আগরতলা, ঢাকা–দিল্লি ও ঢাকা–কাঠমান্ডু।
চুক্তি কার্যকর হলে নেপাল ভারতের চারটি সমুদ্রবন্দর—কলকাতা, হলদিয়া, বিশাখাপত্তনম ও মুন্দ্রা—সরাসরি ব্যবহার করতে পারবে। তবে নেপালের বেসরকারি খাতে ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতার ঝুঁকি ও সীমান্তসংক্রান্ত অবকাঠামোগত দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। পাশাপাশি, পরিবহন ব্যয় ও শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতাও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রটোকলের বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই সুবিধায় বাংলাদেশি পণ্য ভারতের স্থল ও সমুদ্রবন্দর হয়ে তৃতীয় দেশে যেতো, যা এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
প্রটোকলে বলা হয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের দুই বছরের মধ্যে একটি ইলেকট্রনিক প্ল্যাটফর্ম চালু করতে হবে, যাতে যানবাহনের চলাচল ট্র্যাক করা যায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। চালক ও ক্রুরা স্বাক্ষরকারী দেশের নাগরিক হতে হবে এবং বৈধ ভিসা, পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।
চুক্তির বাস্তবায়নে জাতীয় স্থল পরিবহন সুবিধা প্রদান কমিটি, যৌথ স্থল পরিবহন কমিটি এবং একটি কাস্টমস উপকমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটি প্রটোকল বাস্তবায়নে তদারকি ও সমন্বয় করবে, বিরোধ নিরসনে ভূমিকা রাখবে।
এই উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃসংযোগ ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron