দেশে দারিদ্র্যের হার ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা পূর্বের তুলনায় বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। সম্প্রতি পরিচালিত এক পারসেপশন জরিপের ফলাফলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার বিআইডিএসের নিজস্ব কার্যালয়ে এক সেমিনারের মাধ্যমে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮.৭ শতাংশ। তবে বিআইডিএসের ধারণা জরিপে এই হার ২৩.১১ শতাংশ বলে উঠে এসেছে। যদিও বিবিএসের জরিপ বড় পরিসরের ছিল, তবে বিআইডিএস পাঁচটি জেলার উপর ভিত্তি করে জরিপটি পরিচালনা করেছে। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, গত দুই বছরে দেশে দারিদ্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তার অবনতি ঘটেছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহায়তায় পরিচালিত এই জরিপে ঢাকা, বান্দরবান, খুলনা, রংপুর ও সিলেট জেলার ৩,১৫০টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে শহুরে পরিবার ১,৯৯০টি এবং গ্রামীণ পরিবার ১,১১৬টি। ঢাকার অংশগ্রহণকারী পরিবারের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক ৭৫০টি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ডব্লিউএফপির অফিসার ইনচার্জ সিসেমানি পারসেসমেন্ট। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস।
জরিপ অনুযায়ী, ২০২২ সালে গ্রামীণ দরিদ্রতার হার ছিল ২০.৫ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ২৪.৭ শতাংশ। শহুরে দরিদ্রতার হার ১৪.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০.৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা জেলার দারিদ্র্যের হার ২০২২ সালে ৮.৬ শতাংশ ছিল, যা ২০২৪ সালে ১৮.৮৭ শতাংশ হয়েছে। খুলনায় ১০.২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২.৬৭ শতাংশ, সিলেটে ১৬ শতাংশ থেকে ২৫.৫০ শতাংশ, রংপুরে ২১ শতাংশ থেকে ২৫.৩৩ শতাংশ, এবং বান্দরবানে ২৫ শতাংশ থেকে ২৪.৫০ শতাংশে এসেছে।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ক্ষেত্রেও অবস্থার অবনতি হয়েছে। ২০২২ সালে যেখানে ৩৮.০৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল, ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৪৬.৩ শতাংশ হয়েছে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. এ কে এনামুল হক জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে এই জরিপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং সরকারের নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞরা দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন। ডব্লিউএফপির সিসেমানি পারসেসমেন্ট জানান, বিবিএসের জরিপের সাথে তুলনা না করলেও এই গবেষণা বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে সহায়তা করবে।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, "২০২৪ সালে দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, যা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক অর্থনীতির চাপে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।"
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron