

দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধ। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হচ্ছে, দেশ তত বেশি অস্থিরতার দিকে ঠেলে যাচ্ছে এবং এতে সংকট বাড়ছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য বিএনপি গণজাগরণের পথে হাঁটবে এবং জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের মানুষকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাবে।
বিএনপির নেতারা জানান, জাতি এখন গভীর শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ অনিশ্চিত অবস্থায় পৌঁছেছে; দেশ কোথায় যাচ্ছে, কেউ জানে না। স্বৈরাচারকে বিদায় দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনার প্রত্যাশা ছিল, যা পূরণ হয়নি। পবিত্র ঈদুল আজহার পর দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি মধ্যম সময়ের আল্টিমেটাম দিতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এমনভাবে কাজ করছে যেন তারা নির্বাচিত সরকার, যদিও তারা শুধুমাত্র একটি অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের প্রধান কাজ ছিল সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, করিডোর, বন্দর, বিনিয়োগ সম্মেলন ইত্যাদি নিয়ে নেওয়া সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা কোথায়। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সংক্রান্ত আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গত সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হলেও দেশের স্থিতিশীলতার জন্য সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তারা আপাতত কোনো বিরোধে জড়াবে না, তবে নির্বাচন সংক্রান্ত রোডম্যাপ ঘোষণায় গড়িমসির জন্য রাজনৈতিক প্রস্তুতিও নিচ্ছে। বিএনপি তাদের নির্বাচনের দাবি অব্যাহত রাখবে এবং আরও দুই থেকে তিন মাস সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এরপরও যদি নির্বাচন সংক্রান্ত স্পষ্ট দিনক্ষণ না আসে বা প্রলম্বিত হয়, তবে রাজপথে কর্মসূচি দেয়ার প্রস্তুতি নেয় দলটি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তারা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন করে আসছে, যিনি জাতীয়তাবাদী দলের সমর্থনে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা বললেই যেন অপরাধ হয়ে যায়।
বৈঠক সূত্র জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি এবং বিএনপি গভীর ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করছে। তারা মনে করে, সরকারের কিছু অংশ নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিছু পক্ষের মাঠে হঠাৎ আন্দোলনের ঘটনাকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছে। তবে সংকট উত্তরণে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন একমাত্র পথ।
বৈঠকে নেতারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামার জন্য চাপ থাকলেও, তারা সরকারকে কিছু সময় দিতে চান এবং জনমত তৈরি করতে বিভিন্ন কর্মসূচি চালাবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তরুণ সমাবেশের মাধ্যমে দলের তরুণ কর্মীদের উজ্জীবিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিশাল সমাবেশ হয়েছে, বগুড়া ও ঢাকায়ও সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা সমাবেশ থেকে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দাবিতে অবস্থান আরও স্পষ্ট করা হবে। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে, কিন্তু সরকার সেটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
এক নেতার ভাষ্য, বিএনপি সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে চায় না, তাই এখন পর্যন্ত বড় কোনো কর্মসূচি নেয়নি, তবে ভবিষ্যতে নির্বাচনের দিনক্ষণ দাবিতে চাপ বাড়াতে পারে। তারা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় দিতে চায়।
অন্যদিকে, ছাত্র রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের বারবার নতুন দাবি তোলা ও রাজপথে নামার কারণে আগামিতে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে। তারা রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট ও স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি।
বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথ বহাল রাখার গড়িমসি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। দলটি মনে করে, ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ দেয়া উচিত এবং তার কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষোভ যৌক্তিক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রশ্ন তুলেছেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য দেশের জনগণ আর কতদিন অপেক্ষা করবে।