নির্বাচন না হলে বাড়বে অস্থিরতা, মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ

print news
img

২৫ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রত্যাশিত একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ না আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা ও হতাশা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, জাতির উদ্দেশে ভাষণে কোনো নির্দিষ্ট নির্বাচনী সময়সূচি না থাকায় মানুষের আস্থা আরও দুর্বল হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, দেশের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি দ্রুত, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি, পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনা, সন্ত্রাসীদের সক্রিয়তা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক চিহ্নিত অপরাধী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সাময়িক ব্যবস্থা হওয়ায় পুলিশ বাহিনীসহ নিরাপত্তা সংস্থাগুলো পূর্ণ আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনেই তাদের কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা নিশ্চিত করা সম্ভব।

রাজনৈতিক বিভাজন ও সহিংসতা বাড়ছে

এদিকে রাজনৈতিক মেরুকরণও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে বিএনপির দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

নাগরিক পার্টির নেতাদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকরা। হঠাৎ করে অর্থ-বিত্তের প্রদর্শনী ও ব্যতিক্রমধর্মী শোডাউন জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এতে ‘জুলাই বিপ্লবের’ নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের আদর্শ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সেনাবাহিনীকে ঘিরে ষড়যন্ত্র ও বিতর্ক

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীকে কেন্দ্র করে নানা গুজব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা উদ্বেগ তৈরি করেছে। সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে দায়িত্ব পালন করায় এটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি দ্রুত নির্বাচনই সেনাবাহিনীকে বিতর্কমুক্ত করে ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দিতে পারে।

অর্থনীতি স্থবির, বিনিয়োগে আস্থার সংকট

বর্তমানে দেশের অর্থনীতি প্রায় সম্পূর্ণভাবে রেমিট্যান্স নির্ভর। নতুন কোনো বড় বিনিয়োগ নেই, বেসরকারি উদ্যোক্তারাও পিছিয়ে গেছেন। রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেটি ছিল এক ধরনের কৃত্রিম ভারসাম্য, যা দীর্ঘমেয়াদে কোনো সমাধান নয়।

নির্বাচনই একমাত্র সমাধান

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন বিলম্বিত হলে দেশে সহিংসতা বাড়বে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হবে এবং বিনিয়োগ পরিবেশ আরও নাজুক হয়ে পড়বে। একমাত্র উপায় হলো দ্রুত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা সরকার পরিচালনা নিশ্চিত করা।

তাদের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়ন, অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *