ছাত্র-জনতার টানা আন্দোলনের মুখে চাপে পড়ে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘটনার দিন তার ছোট বোন শেখ রেহানা গণভবনে এসে তাঁকে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে অনুরোধ জানান। এরপর পরিবারের সদস্যদের বোঝানো এবং দেশের পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতির প্রেক্ষাপটে তিনি পদত্যাগে সম্মত হন।
রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিচারকদের সামনে লিখিতভাবে এই প্রতিবেদন পাঠ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪ আগস্ট সকাল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হচ্ছে না। আন্দোলনকারীদের বাধা দিতে সাঁজোয়া যানেও আস্থা রাখতে পারছেন না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইজিপি পরিস্থিতি বিবেচনায় জানান, পুলিশের পক্ষে দীর্ঘ সময় এই ধরনের অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়। তখন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। পরে শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরপর তিনি পদত্যাগে রাজি হন। যদিও পদত্যাগপূর্ব এক ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়—শাহবাগ ও উত্তরা থেকে ছাত্র-জনতা গণভবনের দিকে এগিয়ে আসছে। সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় তাকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে শেখ হাসিনা ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে যান। কিছু লাগেজসহ বঙ্গভবনে পৌঁছে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগ করেন। পরে বিকেল সাড়ে ২টার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন।
এছাড়াও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, এর আগে ৩ আগস্ট সারাদিন সংঘাত, প্রাণহানি এবং ছাত্র আন্দোলনের বিস্তৃতির পরও পদত্যাগে অনীহা দেখান শেখ হাসিনা। বরং আন্দোলন দমনে কারফিউ জোরদারের নির্দেশ দেন। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন পথে এগোচ্ছিল।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা ১৯৯৬, ২০০8, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সাত মাসের মাথায় এই ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন তিনি।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron