

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরে ভূ-রাজনীতি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে। সফরে কোনো চুক্তি সই না হলেও বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
এক চীন নীতিতে ফেরার আহ্বান
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চীন বাংলাদেশকে এক চীন নীতিতে ২০০৫ সালের অবস্থানে ফেরার আহ্বান জানাবে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা সহযোগিতার অংশ হিসেবে সমরাস্ত্র সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। একইসঙ্গে বৈশ্বিক উন্নয়ন উদ্যোগ (জিডিআই)-এ বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হবে।
সফরের সূচি
আগামীকাল বুধবার দুপুরে চীনের পাঠানো চার্টার ফ্লাইটে হাইনান যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। বৃহস্পতিবার বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (বিএফএ) সম্মেলনে যোগ দেবেন। শুক্রবার তিনি বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর শনিবার বিকেলে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
সমঝোতা স্মারক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা
সূত্র জানিয়েছে, সফরকে কেন্দ্র করে ১২টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৬ থেকে ৮টি চূড়ান্ত হতে পারে। অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার আওতায় ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, চীনা গ্রন্থকেন্দ্র স্থাপন, চীনের সাহিত্য অনুবাদ ও প্রকাশ এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
এছাড়া, কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি কেন্দ্র স্থাপন, দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আলোচনা, পাঁচ বছরে এক হাজার তরুণের চীন সফরের সুযোগ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
প্রতিরক্ষা ও ঋণ সহায়তা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রসঙ্গও থাকবে। স্বল্প সুদে ঋণ ও অনুদান মিলিয়ে দেড় বিলিয়ন ডলারের সহায়তা আলোচনার অংশ হতে পারে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা সংকট ও পানিসংক্রান্ত সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, সফরে কোনো চুক্তি সই হবে না, তবে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে। জিডিআইতে বাংলাদেশ যুক্ত হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চীনের ঢাকার রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “আমরা এ সফর নিয়ে কাজ করছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।”
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চীন এই সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন আশা করছে, বাংলাদেশ ২০০৫ সালের এক চীন নীতিতে ফিরে যাবে, যেখানে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে আরও জোরালো অবস্থান নেওয়া হয়েছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জরিপ অধিদপ্তর ও পাঠ্য বইয়ে চীনের মানচিত্র সংক্রান্ত বিতর্ক সৃষ্টি হলে বেইজিং আপত্তি জানায় এবং সংশোধনের জন্য অনুরোধ করে।
এছাড়া, চীনের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের প্রস্তাব আসতে পারে। তবে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ ধরনের সামরিক বিষয়গুলো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সরকারের জন্য রেখে দেওয়া হবে।