আশার আলো দেখাচ্ছে বঙ্গোপসাগর। লবণাক্ত পানির বুক চিড়ে প্রতিনিয়ত জেগে উঠছে চর, বাড়ছে বাংলাদেশের আয়তন। যেখানে ৩০ বছর আগে মাছ ধরা ট্রলার চলত, এখন সেখানে চলে ট্রাক, টেম্পো, রিকশা। উজান থেকে আসা পলি জমে তৈরি হচ্ছে নতুন দ্বীপ এবং সেখানে গড়ে উঠছে বসতি। শুধু সন্দ্বীপের আশপাশেই গত ৩৬ বছরে ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো)-র ‘ল্যান্ড এরিয়া এক্সপানশন ইন দ্য ইস্টার্ন পার্ট অব মেঘনা এসটুয়েরি সিন্স ১৯৯০’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। গবেষক ড. মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৮৯ এবং ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সন্দ্বীপে ১৯৮৯ সালে স্থায়ী ভূমির পরিমাণ ছিল ৩২৮ বর্গকিমি, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২৬ বর্গকিমিতে। এই সময়ের মধ্যে ডুবোচরের পরিমাণও বেড়ে হয়েছে ৪১৩ বর্গকিমি। তিন যুগ আগে যেসব স্থান ছিল কেবল ডুবোচর, এখন সেগুলোতে গড়ে উঠেছে জনবসতি, যেমন—স্বর্ণদ্বীপ ও ভাসানচর।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, উপকূলজুড়ে বর্তমানে ছয় শতাধিক ডুবোচর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, যেগুলোর মোট আয়তন প্রায় ১ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার। সবচেয়ে বড় ডুবোচরটি সন্দ্বীপঘেঁষা এবং এর আয়তন ৮৫ বর্গকিলোমিটার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর মাধ্যমে প্রতিবছর বাংলাদেশে আসে প্রায় ১ হাজার ৬০ মিলিয়ন টন পলি, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই পলি জমেই তৈরি হচ্ছে নতুন ভূমি। তবে পরিকল্পনার অভাবে কিছু চর আবার হারিয়ে যায়। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে এসব চরকে স্থায়ী দ্বীপে রূপান্তর করা সম্ভব।
বন বিভাগ ইতিমধ্যেই কেওড়া বনায়নের মাধ্যমে কিছু চরের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেছে। এতে ব্যয়ও কম। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে ক্রসড্যাম ব্যবহার করে দ্রুত ও পরিকল্পিত ভূমি পুনরুদ্ধার সম্ভব। ১৯৮৭ সালের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সন্দ্বীপ-উড়িরচর-নোয়াখালী ক্রস বাঁধ ৩০ বছরের মধ্যে ৩৬ হাজার হেক্টর নতুন জমি তৈরি করতে পারে, যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে সরাসরি উপকৃত করবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডস যেমন চর ভরিয়ে ভূমি তৈরি করেছে, আমরাও চাইলে পারি। তবে আমাদের প্রয়োজন পরিকল্পনা ও সঠিক বিনিয়োগ।’’
১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার চাপে প্রতিনিয়ত কমছে কৃষিজমি। রোহিঙ্গা সমস্যা, নগরায়ণ ও পরিবেশগত চাপে যখন দেশের স্থলভাগ সংকুচিত, তখন বঙ্গোপসাগরের চরগুলোর মধ্যে সম্ভাবনার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এই চরগুলোই হতে পারে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ভূখণ্ড বিস্তারের মূল ভরসা।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron