

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে ভোরের অঝোর বৃষ্টির মধ্যেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। নিজের সাহসিকতার জন্য পরিচিত এই নেতা সেদিন বন্দুকের গুলির শিলাবৃষ্টিতে প্রাণ হারান।
জিয়াউর রহমান ছিলেন ১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে একজন পাকিস্তানি সৈনিক এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা একজন জাতীয়তাবাদী অফিসার। তার আকস্মিক মৃত্যুর পরপরই তার স্ত্রী খালেদা জিয়া রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
তৎকালীন পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আব্দুস সাত্তার সেনাপ্রধান এরশাদের সমর্থনে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেও, মাত্র আড়াই বছর পর ১৯৮৪ সালের ১৩ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর দায়িত্ব নেন খালেদা জিয়া।
এদিকে, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। দুই ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা এই দুই নারী নেত্রী পরবর্তী সময়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। খালেদা জিয়া সাত দলীয় জোটের এবং শেখ হাসিনা ১৫ দলীয় জোটের নেতৃত্বে ছিলেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি সরকার গঠন করলে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন। তবে তার নেতৃত্বাধীন সরকারকে ঘূর্ণিঝড়সহ বিভিন্ন সংকটের সম্মুখীন হতে হয়। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তাকে অযোগ্য বলে আক্রমণ করে।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সমর্থনে খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হন।
২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকলেও, পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থাকতে হয় তাকে। হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি একাধিকবার নির্বাচন বর্জন করে। দলের নেতারা বিভিন্নভাবে সংগ্রাম চালিয়ে গেলেও, খালেদা জিয়া সেসময় সরকার কর্তৃক চাপের মুখে ছিলেন।
গণআন্দোলনের মুখে ২০২4 সালে শেখ হাসিনার পতন হয় এবং তিনি বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পরপরই মুক্তি পান খালেদা জিয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে গেছেন, যেখানে তিনি তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে পুনর্মিলিত হন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়া অনেক সংকট মোকাবিলা করেও টিকে আছেন। আদালত সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে থাকা একাধিক মামলার রায় বাতিল করেছেন। ৭৯ বছর বয়সী এই নেত্রী এখন আরও সতর্ক ও প্রস্তুত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন পরবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেবে, তখন আবারও তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরে আসবেন।