

বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকে পুলিশ বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি পাঠাবে না—এমন ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বাজার নির্ভর এক্সচেঞ্জ রেটের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের নীতির সুফল পেতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। অন্যথায় সামান্য চাহিদা বাড়লেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
এর আগেও গভর্নরের বেফাঁস মন্তব্যে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ৮ মাস আগে তিনি বলেছিলেন, অন্তত ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে। এ বক্তব্যে আতঙ্কিত হয়ে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, যা ব্যাংক খাতে সংকট আরও বাড়িয়ে দেয়। যদিও ২০২২ সালের আগস্টেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করেছিলেন।
বর্তমানে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী ডলারের বাজারকে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এতে ডলারের দাম বেড়ে গেছে ৯৬ টাকা থেকে ১২৩ টাকায়। অথচ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে নীতি সুদ চারবার বাড়িয়ে ব্যাংকঋণের সুদ ১৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যার ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধের পথে। এর পাশাপাশি আমদানি সীমিতকরণেও সংকট তৈরি হয়েছে।
রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২২ সালের ৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে বর্তমানে ২৫.৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, আমদানি বাড়লে সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে বাজার নির্ভর ডলারের মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি রিজার্ভ শক্তিশালী করাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তাঁরা।
বিআইবিএম-এর অধ্যাপক আহসান হাবীব বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ম্যানেজড ফ্লোটিং’ পদ্ধতিতে কাজ করছে—যেখানে বাজারে ঘাটতি হলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি এবং উদ্বৃত্ত হলে ডলার কেনা হবে। তবে এটা দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে রিজার্ভ বাড়ানো জরুরি। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী নেতারা এবং অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, রিজার্ভকে অন্তত ৫-৬ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো উচিত, যাতে ভবিষ্যতের বড় কোনো সংকটে প্রস্তুত থাকা যায়।
খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১২৫-১২৬ টাকায়। সরবরাহ কম থাকায় কিছুটা দাম বেড়েছে, যদিও ব্যাংকগুলো জানিয়েছে বাজারে পর্যাপ্ত ডলার মজুত আছে। তবে কিছু বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ কর আরোপের ফলে হুন্ডি বাড়তে পারে, যা ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের প্রবাহকে হুমকির মুখে ফেলবে।
সবশেষে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এখন সময় হলো দায়িত্বশীল নীতিনির্ধারণ এবং আস্থা ফিরিয়ে আনার। কারণ ব্যাংক খাত ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার—উভয়ের স্থিতিশীলতা ছাড়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়।