

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ হিসেবে চিত্রিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রস্তাব এনে সংস্কার কার্যক্রমকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। আজ রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি ছয়টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং কমিশনের প্রতিদিনের বৈঠকে দলের প্রতিনিধিরা কার্যকরভাবে যুক্ত থেকেছেন। তিনি বলেন, আমরা অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছি এবং যুক্তি-তথ্য দিয়ে একমত প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেছি। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর কমিশনসমূহ যেসব প্রস্তাব দিয়েছে, তার বাইরে গিয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়া এবং বিতর্কিত বিষয় তুলে ধরে সংস্কারের অগ্রগতি ধীর করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে দুর্বল করার মত কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং তা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী। আমরা মনে করি, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ নির্বাচিত সরকারের শক্তিকে খর্ব করা উচিত নয়।
সংস্কার কমিশনগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে বিএনপি মহাসচিব জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশনের আলোচনায় এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেওয়া হয়নি, তবে র্যাব বিলুপ্তিসহ অধিকাংশ প্রস্তাবে ঐকমত্য রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্পর্কিত ৪৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি সম্মত হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কারে ২০৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮৭টিতে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত এবং ১১টি প্রস্তাবে বিরোধিতা জানিয়েছে।
বিচার বিভাগীয় সংস্কারে ৮৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে একমত এবং ৯টিতে আংশিক একমত হয়েছে বিএনপি। নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ২৪৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক এবং ৬৪টিতে ভিন্নমত জানিয়ে যৌক্তিক সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১টি প্রস্তাবের অধিকাংশে বিএনপি একমত, যেখানে ‘৭০ অনুচ্ছেদ’ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের মতো বিষয়েও দলটি ছাড় দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি শুধু বিরোধিতা নয়, গঠনমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চায়। জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪টি কমিটি ছাড়াও আসন অনুযায়ী পদে সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন কিছু প্রস্তাব যেগুলো রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় গভীর প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনও আলোচনা শুরু হয়নি। তাই বিএনপি এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দীর্ঘ দেড় দশক ধরে স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ের মাধ্যমে বিএনপি আরও শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছে। লাখো কর্মীর আত্মত্যাগ ও ত্যাগ স্বীকারে গঠিত এই ঐক্য নিয়ে দলটি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, “আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ না হই।”