বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল—সব পর্যায়েই এখন হাইব্রিড ও সুবিধাবাদী নেতা-কর্মীদের দাপটে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে দলটি। দলীয় সূত্র বলছে, গত সাত মাসে অন্তত ৩ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ সত্ত্বেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও নিবেদিত নেতারা।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানীসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাইব্রিড নেতাদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও টেন্ডার সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তবে এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা রাজনৈতিকভাবে কখনো বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরাই এখন দলে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন, অনেক সময় কেন্দ্রীয় কমিটির সুপারিশে গ্রামগঞ্জে নেতৃত্ব কুক্ষিগত করছেন।
বিশেষ করে স্বচ্ছ রাজনৈতিক অতীতবিহীন কিছু ব্যক্তি আন্দোলন-সংগ্রামে না থেকেও ঢাকায় ‘সরাসরি সংযোগে’ প্রভাব খাটিয়ে নেতা বনে গেছেন। এতে সংগঠনের পুরনো ও পরীক্ষিত নেতারা একদিকে যেমন অবমূল্যায়িত হচ্ছেন, তেমনি হারাচ্ছেন রাজনৈতিক গতিপথও।
দলীয় দপ্তরের হিসাব বলছে, শুধু বিএনপিই নয়, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও হাইব্রিড ও বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ১,৮০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ৮০০ জনকে বহিষ্কার, ৭৫০ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিস এবং বাকিদের সতর্ক বা পদ স্থগিত করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও ৪০০ জনকে বহিষ্কার এবং ৬০০ জনকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদল থেকেও যথাক্রমে ১০০ জনের বেশি বহিষ্কার ও কয়েকশ' জনকে শাস্তিমূলক নোটিস পাঠানো হয়েছে।
তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় অনেক বিতর্কিত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যেমন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের বিএনপি নেতা মীর ছগিরের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তাকে এখনও বহিষ্কার করা হয়নি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের বিব্রত করেছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে, দলের হেভিওয়েট নেতাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ৫ মার্চ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদারকে দলীয় সব পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, নতুন কোনো যোগদান অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। হাইব্রিডদের বিষয়ে দল সতর্ক এবং প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তিনি বলেন, "বিএনপির রাজনীতিতে ত্যাগই হচ্ছে মূল চাবিকাঠি। যারা দলের দুর্দিনে পাশে ছিলেন, তারাই প্রকৃত নেতা।"
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron