

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। দেশটির সরকারি সূত্র ও এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই অভিযানে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের নয়টি স্থানে হামলা চালানো হয়। এতে অন্তত ৭০ জন সন্ত্রাসী নিহত এবং ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে দাবি করছে ভারত।
ভারতীয় সূত্র মতে, হামলার লক্ষ্য ছিল লস্কর-ই-তৈয়বা ও জইশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটি। মুজাফফরাবাদ, কোটলি, বাহাওয়ালপুর, রাওয়ালকোট, চকস্বরী, ভিম্বার, নীলম ভ্যালি, ঝিলাম ও চকওয়াল এলাকায় ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। ভারতের পক্ষ থেকে এ হামলাকে “সন্ত্রাসবিরোধী প্রতিশোধ” বলা হলেও, পাকিস্তান একে “কাপুরুষোচিত ও আগ্রাসনমূলক হামলা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
পাকিস্তানের আইএসপিআর’র মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরীর দাবি, হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশু ও নারী। তিনি আরও জানান, দুটি মসজিদেও হামলা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
এই হামলার জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে এবং একটি ব্রিগেড সদরদপ্তর ধ্বংস করা হয়েছে। সীমান্তের এলওসি সেক্টরে ভারতীয় সেনাদের একটি চৌকিও মিসাইল হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে ইসলামাবাদ।
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। পাকিস্তান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করে বলেছে, তারা জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করবে। উপমহাদেশের দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে এমন সঙ্ঘাত কেবল কাশ্মীর নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
এই সংঘর্ষে উভয় দেশের ভিন্ন ভিন্ন দাবি এবং পাল্টা পাল্টি বিবৃতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন জরুরি দায়িত্ব হচ্ছে, উভয় পক্ষকে শান্তি ও সংলাপের পথে ফিরিয়ে আনা—যাতে করে এই উত্তেজনা পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ রূপে রূপান্তরিত না হয়।