যমুনার সামনে বিজয়োল্লাসে ভাসছেন আন্দোলনকারীরা

print news
img

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই—হাইকোর্টের এমন আদেশের পর রাজধানীর যমুনা ভবনের সামনে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন আন্দোলনরত নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে আদেশ আসার পরপরই যমুনার সামনে থাকা ইশরাকপন্থী নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা যোগ দেন বিজয় মিছিলে। চারদিক থেকে ছুটে আসেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ‘গেজেট হয়েছে, এবার শপথ চাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

এর আগে, আদালতের রায় অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা ও গেজেট প্রকাশের দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা থেকে যমুনার সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরা। রাতে সেখানে যোগ দিয়ে ইশরাক ঘোষণা দেন, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যমুনা ছাড়ছি না।” এরপর দ্বিতীয় দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালেও তারা অবস্থান চালিয়ে যান, এমনকি বৃষ্টিতেও পিছু হটেননি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস ডিএসসিসির মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২ ফেব্রুয়ারি ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচনে তাপস পেয়েছিলেন প্রায় ৪ লাখ ২৪ হাজার ভোট, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন পান প্রায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট। ভোটে অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে মামলা করেন ইশরাক।

২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া ডিএসসিসির প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

২০২৫ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ভোটের ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন এবং ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে।

এই গেজেটের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়ে রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামের দুই ব্যক্তি আদালতে আইনি নোটিশ দেন এবং পরে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তারা দাবি করেন, মেয়র পদ ইতোমধ্যে অধ্যাদেশের মাধ্যমে শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তারা রায়ে আইনি প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ হয়নি বলেও অভিযোগ তোলেন।

তবে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রিট খারিজ করে দেন। আদালত মন্তব্য করে বলেন, রিটকারীরা মামলার পক্ষভুক্ত নন এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির সঠিক ফোরাম হচ্ছে আপিল ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট নয়। এই আদেশের ফলে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে আর কোনো আইনগত বাধা রইল না।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা একটি আলোচিত আইনি লড়াইয়ের অবসান ঘটল এবং নতুন করে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়লো রাজধানীর রাজপথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *