মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তারা বলছে, এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে নেওয়া অনুচিত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, “এই করিডোরের কারণে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।” তিনি আরও বলেন, “মানবিক করিডোর নিয়ে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, “রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার, কারণ এর সঙ্গে নিরাপত্তার নানা বিষয় জড়িত থাকতে পারে।”
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “এ ধরনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এককভাবে নেওয়া উচিত নয়। এটি অবশ্যই রাজনৈতিক দল ও জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।”
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে সহায়তা পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় এই করিডোরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এরপর থেকেই রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষ করিডোর দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, রাখাইন রাজ্যে জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে তা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এবং নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে বাস্তবায়ন হবে।
এদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের রোববার বাংলাদেশ সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দাবি করা হলেও, পরে সোমবার তিনি অবস্থান পরিবর্তন করে বলেন, “আমরা চেয়েছি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠনের ব্যবস্থা, স্বাধীন রাষ্ট্র নয়।”
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ এবং মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বিরোধ পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে মানবিক করিডোর দিতে গিয়ে বাংলাদেশ যাতে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে না পড়ে, সে বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা ও জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron