

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার কঠিন লড়াই চালাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের ওপর বিনা উসকানিতে বড় ধরনের হামলা চালায়। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে টানা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে।
এই সামরিক উত্তেজনার কিছুদিন আগেই ইসরায়েলি পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর সরকার বিরোধীদের তীব্র চাপের মুখে পড়ে। বিরোধীরা এমন একটি অনাস্থা প্রস্তাব তোলে, যা পাস হলে সরকারের পতন হতো। যদিও শেষ পর্যন্ত ৬১ জন সদস্য বিরোধিতা করায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়। ফলে আগামী ছয় মাস নতুন করে আর কোনো অনাস্থা প্রস্তাব তোলা যাবে না। তবু এটি প্রমাণ করে, নেতানিয়াহুর সরকার কতটা হুমকির মুখে ছিল।
ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি ইস্যুতে বিভাজন তৈরি হয়েছিল সরকার জোটে। ইসরায়েলে প্রতি সুস্থ তরুণের জন্য সেনাবাহিনীতে চাকরি বাধ্যতামূলক হলেও দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় ছাত্ররা এর বাইরে ছিল। গাজা যুদ্ধের কারণে জনবল সংকট দেখা দিলে তাদেরও সেনাবাহিনীতে নেওয়ার দাবি উঠে, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয় ধর্মীয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী। শেষপর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে নেতানিয়াহু তাদের সমর্থন ধরে রাখতে সক্ষম হন।
এই সংকটের পরপরই, ১৩ জুন ইরানে বড় হামলা চালায় ইসরায়েল, যা বিরোধীদের মতে সরকারবিরোধী চাপ থেকে দৃষ্টি সরাতে চালানো হয়েছে। যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই নেতানিয়াহু চরম ডানপন্থী ও ধর্মীয় জোটের সমর্থন ধরে রাখায় আপাতত ক্ষমতায় আছেন।
তবে বিরোধীদের প্রশ্ন—এই সরকার গেলে কি যুদ্ধ থামবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান চরম ডান ও ধর্মীয় দলগুলোর উপস্থিতি থাকলে যেকোনো নতুন সরকারও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপের মুখে থাকবে।
এদিকে নেতানিয়াহু নিজেই স্বীকার করেছেন, গাজায় এক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তার সরকার অস্ত্র ও সহায়তা দিয়েছে, যারা ত্রাণ ছিনতাই ও ত্রাণকর্মীদের হত্যায় জড়িত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজার নিরীহ মানুষদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইতিহাস বলছে, ফিলিস্তিনকে অস্থিতিশীল করতে ইসরায়েলের এমন কৌশল নতুন নয়। গাজা, ইয়েমেন, সিরিয়া, লেবাননের পর এবার ইরানের ওপর হামলার মাধ্যমে নেতানিয়াহু মার্কিন সরকার, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এই সমর্থন কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।