দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশকে দেড় বছর সময় বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। আগে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে এই প্রকল্পের ঋণের মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধ শুরু করার কথা থাকলেও, সরকারের অনুরোধে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর।
শুধু সময়ই নয়, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ৫০ কোটি ডলারের ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না করায় যে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জরিমানা হয়েছিল, সেটিও মওকুফ করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ সময়মতো ডলার পরিশোধ করতে না পারায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাশিয়া এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংশোধিত প্রটোকলে এমন ছাড় দিয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ইউরোপ উইংয়ের প্রধান ড. মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের নিয়মিত যোগাযোগ ও আলোচনার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত এসেছে। প্রকল্পের কাজ এখনও অনেকটাই বাকি থাকায় আরও দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর আলোচনা চলছে এবং রাশিয়াও তাতে সম্মত।
রূপপুর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঋণের অর্থ আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হলেও, নিষেধাজ্ঞার কারণে তা ডলারে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিকল্প কোনো মাধ্যমে পরিশোধের বিষয়ে আলোচনা চললেও এখনো চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।
প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা)। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে রাশিয়ার সরকার, বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়ন। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭.৭০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বাকি ৩.৬৮ বিলিয়ন ডলার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া নির্মাণকাজ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ রূপপুর প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সংশোধনে সম্মতি দেন। এরপর সংশোধিত প্রটোকলে বিলম্ব মাশুল সংক্রান্ত শর্তও বাতিল করা হয়।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ দেরি করলেও তা বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরের কারণে হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক নিষেধাজ্ঞা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রই হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় একটি বড় মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron