এশিয়ার নেতাদের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক নেতৃত্বের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে অনুষ্ঠিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা সংকট ও বাংলাদেশের ভূমিকা
ড. ইউনূস বলেন, “গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা মিয়ানমারের নাগরিক। এর ফলে বাংলাদেশকে ব্যাপক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যদিও বৈশ্বিক প্রচেষ্টা নাটকীয়ভাবে কমে এসেছে, তবে তা এখনও চলমান। এশিয়ার দেশগুলোর এখন একসঙ্গে কাজ করে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা দরকার।”
বৈশ্বিক সংকট ও এশিয়ার ভূমিকা
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব বহুমুখী সংকটে ভুগছে। যুদ্ধ ও সংঘাত মানবাধিকারের ক্ষতি করছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “বিশ্বের নিন্দার মধ্যেও গাজায় গণহত্যা চলছে, যা শুধু আরব বা মুসলিমদের বিষয় নয়, এটি একটি মানবিক সমস্যা।”
এছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে এবং মিয়ানমারের সংকট আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এশিয়ার সম্ভাবনা ও অগ্রগতি
ড. ইউনূস বলেন, “এশিয়ার ক্রমবর্ধমান তরুণ জনসংখ্যা উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতার মূল চালিকা শক্তি হতে পারে। এজন্য তরুণদের উদ্যোক্তা কার্যক্রম এবং টেকসই সমাধানের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “এশিয়ায় নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ এখনও কম, পাশাপাশি নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য বিদ্যমান। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে আমাদের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব
এশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে মানব সভ্যতার স্থিতিশীলতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “ইসলাম, কনফুসিয়ানবাদ, বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মের দর্শন বিশ্ব চিন্তাধারাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি নৈতিকতা, শাসন ও মানবিক চেতনায় অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “বহু শতাব্দী ধরে এশিয়া তার বৈচিত্র্য গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণে অঞ্চলটি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে এবং বৈশ্বিক প্রভাব আরও বিস্তৃত করছে।”
সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্টজন
বোয়াও ফোরামের এ সম্মেলনে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরামের চেয়ারম্যান বান কি-মুন, বোয়াও ফোরামের মহাসচিব ঝাং জুন এবং চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াং বক্তৃতা করেন।
সূত্র: বাসস
দৈনিক নব জাগরণ/Daily Nobo Jagoron
Email : newsnobojagoron@gmail.com
Nobo Jagoron