

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সরকারের উদ্যোগে মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্বাগত জানিয়েছে। তারা তাদের জান-মাল, ভিটে-বাড়ি ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে বসবাসরত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার পক্ষ থেকে স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, তারা যেকোনো সময় মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রস্তুত।
সাম্প্রতিক থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে, মিয়ানমার জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে জানায় যে, তারা ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এছাড়া, যাচাই-বাছাইয়ের পর আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এই নতুন খবরটি উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্বস্তির সঞ্চার করেছে। রোহিঙ্গা নেতারা এই প্রক্রিয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তারা জানান, ড. ইউনূস বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ ও সফরের মাধ্যমে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, এবং এই পদক্ষেপটি বাস্তবমুখী একটি উদ্যোগ হিসেবে তাদের কাছে মনে হয়েছে।
রোহিঙ্গারা মনে করছেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে কোনো বিরতি না থাকে, এবং একটি সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হয়, সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা জান-মাল, ভিটে-বাড়ি ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তাসহ একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন চাইছেন।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, “আমরা আরাকানে ফিরে যেতে খুবই খুশি হবো। এতদিন পর ড. ইউনূসের মতো একজন নেতা আমাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্য নিয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।” তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার থেকে আর কোনো রোহিঙ্গা যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সেজন্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত।
এদিকে, কক্সবাজারের ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক অতিরিক্ত কমিশনার শামস্ উজ্ দোহা জানান, “এটি একটি রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়, এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। যখন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যাবে, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করব।”
বাংলাদেশ ২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত ছয় ধাপে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের তালিকা প্রদান করেছে। সেই তালিকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মিয়ানমারের নতুন দৃষ্টিভঙ্গিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করছে। একইসাথে, আরও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করার কথা জান্তা সরকার জানিয়েছে