

আন্তর্জাতিক ডেস্ক |
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বর্ণবাদ এবং জাতিগত বিদ্বেষ সংক্রান্ত বিতর্কে জড়ালেন। এ বার ইহুদি জনগোষ্ঠী নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ জুলাই) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন,
“আমি জানতাম না যে ‘শাইলক’ শব্দটি কেউ কেউ ইহুদি-বিদ্বেষী হিসেবে দেখে।”
এই মন্তব্যের সূত্রপাত হয় তার আগের দিন আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মোইনেসে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনী সমাবেশে, যেখানে ট্রাম্প উচ্চ সুদের ঋণদাতাদের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন,
“কিছু ভালো ব্যাংকার আছেন, আবার কিছু শাইলকের মতো খারাপ মানুষ আছে যাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া উচিত নয়।”
এই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে।
ইহুদি সংগঠনের প্রতিক্রিয়া
বিশিষ্ট ইহুদি সংগঠন অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) ট্রাম্পের বক্তব্যকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন, আপত্তিকর এবং বিপজ্জনক” আখ্যা দিয়েছে।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়:
“’শাইলক’ শব্দটি শতাব্দীপ্রাচীন ইহুদি-বিরোধী স্টেরিওটাইপকে পুনরুজ্জীবিত করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ ধরনের ভাষা গ্রহণযোগ্য নয়।”
জিউইশ কাউন্সিল ফর পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-এর সিইও অ্যামি স্পিটালনিক বলেন,
“ট্রাম্প বহুদিন ধরে ষড়যন্ত্রমূলক ও বিদ্বেষমূলক ধারণাকে স্বাভাবিক করে তুলছেন। ‘শাইলক’ শব্দটি ব্যবহারে তিনি আবারও তা প্রমাণ করলেন।”
ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান বলেন,
“এটা নিছক ভুল নয়, এটা ইচ্ছাকৃত ইহুদি-বিদ্বেষ। ট্রাম্প জানেন তিনি কী বলছেন।”
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
‘শাইলক’ চরিত্রটি উইলিয়াম শেকসপিয়ারের নাটক The Merchant of Venice-এর একজন কুখ্যাত ইহুদি ঋণদাতা, যিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ ও নির্মম হিসেবে পরিচিত। তিনি ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে “এক পাউন্ড মাংস” দাবি করেন— এই চিত্রায়ন দীর্ঘদিন ধরে ইহুদিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক স্টেরিওটাইপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অতীতের দৃষ্টান্ত
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-ও একই শব্দ ব্যবহার করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন। তবে তিনি দ্রুত ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন এবং বলেন,
“আমার আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।”
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প অবশ্য দাবি করছেন, তিনি ‘শাইলক’ শব্দটি কখনও ইহুদি-বিরোধী হিসেবে জানতেন না। তার ভাষ্য:
“আমার কাছে শব্দটির মানে একজন উচ্চ সুদে ঋণদাতা। ইহুদি বিদ্বেষের কোনো ইচ্ছা ছিল না।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য নিয়ে আবারও বিভাজিত হয়েছে মার্কিন রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। অনেকেই বলছেন, এটি নিছক অজ্ঞতা নয় বরং একটি প্রবণতা— যেখানে তিনি বারবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষমূলক ইঙ্গিত দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন।
সূত্র: সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, জিউইশ ইনসাইডার