

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের (এলজিআরডি) অধীনে প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নেয়া বহু প্রকল্পেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব প্রকল্পের সংস্কারের প্রত্যাশা থাকলেও তা এখনো বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি তার আগের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের সময় নেয়া প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই অব্যাহত রেখেছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া প্রকল্প বাতিল ও জিওবি (সরকারি অর্থায়নে) প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধন করছেন, তথাপি বাস্তবচিত্রে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়েছে এবং বরাদ্দেও তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।
পরিকল্পনা বিভাগের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি)-তে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে ১১২টি হয়েছে, যা মূল এডিপিতে ছিল ১০২টি। বরাদ্দ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬,৯০৯ কোটি টাকা, যেখানে মূল এডিপিতে ছিল ১৭,৯৮৬ কোটি টাকা।
সিপিডি’র ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প পুনর্বিন্যাসের কাজ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হয়নি, ফলে জনগণের কাছে সুফল পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম।”
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত হচ্ছে সরকারি অর্থ অপচয়ের অন্যতম ক্ষেত্র। প্রকল্প শেষ হয় না, ঠিকাদারি সিন্ডিকেট ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রকল্প ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার বদলালেও প্রকল্প কাঠামো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।”
এদিকে উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া জানিয়েছেন, “আমরা অর্ধেকের বেশি প্রকল্পে ডিপিপি সংশোধন করেছি। বৈদেশিক সহায়তায় নেয়া প্রকল্পে পরিবর্তন আনা কঠিন, কারণ এতে সময় ও ব্যয় বাড়ে।”
তবে পরিকল্পনা বিভাগ বলছে, উপদেষ্টার দাবির চেয়ে প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে মাত্র ১,০৭৭ কোটি টাকা। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন কিছু প্রকল্পে বরাদ্দ কমলেও আগের সরকারের প্রকল্পগুলো অনেকাংশেই বহাল রয়েছে এবং জিওবি অর্থায়ন থেকেও নতুন বরাদ্দ পেয়েছে।
অপরদিকে, উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে টেন্ডার-বাণিজ্যসহ শতকোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে: এই অর্থ খরচে আদৌ কোনো স্থায়ী উন্নয়ন হচ্ছে কিনা—নাকি এটি রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সুবিধাভোগীদের হাতে দুর্নীতির আরেকটি উপায়মাত্র?