

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়েছে। সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্টুডিও থেকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। এবারের বাজেট হাইব্রিড পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে — সংসদের বাইরে থেকে টেলিভিশন সম্প্রচারের মাধ্যমে। এটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ইতোমধ্যে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে রাজস্ব বাজেটের আকার ৫ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। লক্ষণীয় বিষয় হলো, চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট সাত হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাজেটের মোট আকার হ্রাস পাচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য ও দৃষ্টিভঙ্গি:
বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। আমাদের ওপর বর্তায় বিগত সরকারের রেখে যাওয়া প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার এবং নৈরাজ্য দূর করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার কঠিন কাজটি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি স্বস্তি এবং আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই, মাত্র ১০ মাসেরও কম সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সে লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে আশায় আমরা বুক বেঁধেছিলাম, তা খুব শিগগিরই পূরণ করতে সক্ষম হবো ইনশাল্লাহ।”
বাজেট উপস্থাপনার ধরনে পরিবর্তন:
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোর বড় পরিবর্তনের কারণে এবার বাজেট সংসদে নয়, ভিন্ন আঙ্গিকে টেলিভিশন মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের প্রেক্ষাপট ও দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্রও তুলে ধরা হবে।
তথ্যপ্রাপ্তি ও মতামত প্রদান:
বাজেট সম্পর্কিত সব তথ্য, দলিল ও বিবরণ পাওয়া যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.mof.gov.bd) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট (www.nbr.gov.bd) থেকে। এছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কিংবা বিদেশ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে (budgetfeedback@finance.gov.bd) বাজেট বিষয়ে মতামত ও সুপারিশ পাঠানো যাবে।
এই বাজেট উপস্থাপনার মাধ্যমে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিনির্ধারণের পথরেখা স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।