

জুলাই আহতদের একাংশের বিরুদ্ধে রড-লাঠি ও চাপাতি নিয়ে হামলার অভিযোগ, সেবা বন্ধ
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক কক্ষে ভাঙচুর এবং চিকিৎসক-নার্সদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থনে আহতদের একটি অংশের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় শুধু হাসপাতালের স্টাফরাই নন, চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগীও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কী ঘটেছে?
বুধবার (২৮ মে) সকাল ১১টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা অবস্থান কর্মবিরতি পালন করছিলেন পরিচালকের কক্ষে অনধিকার প্রবেশ ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে। ঠিক সেই সময় জুলাই আন্দোলনে আহত একদল ব্যক্তি রড, লাঠিসোঁটা এবং চাপাতি নিয়ে হামলা চালান। তারা কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসকদের ওপর চড়াও হন এবং হাসপাতালের মূল ফটক বন্ধ করে মারধর শুরু করেন।
চিকিৎসক ও নার্সদের দাবি, এই হামলাকারীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সহিংসতায় পরিণত করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন,
“আহতদের আমরা সেবা দিয়ে সুস্থ করেছি, তখন ভয় পেতেও হয়নি। আজ তারাই আমাদের গায়ে হাত তুলেছে। হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“হামলাকারীদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী বা বেকার শ্রেণীর মানুষ, শিক্ষার্থী নন। তারা হাসপাতালটিকে দখলে নিয়ে বসবাসের চেষ্টাও করছে বলে আশঙ্কা।”
চিকিৎসা কার্যক্রম স্থবির
ঘটনার জেরে হাসপাতালের সকল রুটিন চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। আউটডোর এবং নির্ধারিত অপারেশন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ, শুধুমাত্র জরুরি বিভাগ সীমিত আকারে চালু রয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নূরে আলম বাবু বলেন,
“গতকাল পরিচালকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। আজ কর্মবিরতির সময় চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সেবা দেওয়া সম্ভব না। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা জরুরি।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন,
“আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, কর্মবিরতির সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে।”
শেরে-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক জানিয়েছেন,
“হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবরুদ্ধ চিকিৎসক-নার্সদের মুক্ত করা হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন।”
পটভূমি ও তাৎপর্য
উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থনে আহতদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অবস্থান করে আসছেন। তবে এই হামলার ঘটনায় তাদের বৈধতা ও আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের ভেতরে এমন সহিংসতা চিকিৎসা ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে বড় সংকট তৈরি করেছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
চিকিৎসক-নার্সদের একটি অংশ এরই মধ্যে দাবি তুলেছেন—হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তারা কর্মসূচি আরও বিস্তৃত করবেন।
এটি একটি অশনিসংকেত, যেখানে আন্দোলনের নাম করে সহিংসতা চিকিৎসা সেবাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, যা সাধারণ রোগীদের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলছে।