খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এগিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, মজুদের সক্ষমতা বাড়ছে

print news
img

দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলেও, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে চাল ও গম মিলিয়ে ২১ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরপূর্তি উপলক্ষে ৪ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১৯ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন গম সরকারি গুদামে সংরক্ষিত আছে। চলতি মেয়াদে আরও ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল ও ৪ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

চলতি বছর সরকারিভাবে ৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ১৯ লাখ ৬৭ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২ লাখ ৬১ হাজার ও ২ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন বেশি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৩৩ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আগের বছরের তুলনায় খাদ্য বিতরণ বেড়েছে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।

সরকারি খাতে গম আমদানির উৎস বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া ও ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করা হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বেসরকারি খাতেও খাদ্যশস্য আমদানির গতি বাড়ানো হয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ টনের বেশি।

খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সক্ষমতা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিল ২৩ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। মধুপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও নারায়ণগঞ্জে ৪টি আধুনিক সাইলো নির্মাণের ফলে বর্তমানে মজুদের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টনে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই সক্ষমতা ২৬ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান মজুদকে মোটামুটি সন্তোষজনক বলা গেলেও, আরও বাড়ানো জরুরি। ইতোমধ্যে দুই লাখ টন চাল ও গম কেনার চুক্তি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি আমদানিকৃত খাদ্যশস্য পাইপলাইনে রয়েছে, যা শিগগিরই দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বন্যায় ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি, ফলে মোট মজুদ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।

তবে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমি কমে যাওয়ায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার সীমাবদ্ধতার মাঝেও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বর্তমানে খাদ্য মজুদের সক্ষমতা ২২ লাখ টন হলেও ভবিষ্যতে তা ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে, প্রতিটি গুদামে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণ করা যাবে। তবে এসব সাইলোর মধ্যে কিছু নির্মাণ বিতর্কিত অবস্থানে হয়েছে, যেমন—টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাইলোটি যেখানে পরিবহনের সুবিধা সীমিত। একই অবস্থা ময়মনসিংহের সাইলোর ক্ষেত্রেও। যদিও ভবিষ্যতে এসব সাইলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো ‘পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (পিএফডিএস)’ এর আওতায় ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রি) কার্যক্রম। এটি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীসহ সারাদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে এই কার্যক্রম তদারকি করা হচ্ছে।

প্রয়োজনে ওএমএস ট্রাকসেলে চাল-আটার পাশাপাশি সবজিও বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ কিনে নির্দিষ্ট এলাকায় কম দামে বিক্রির প্রস্তুতিও রয়েছে।

এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত ৯ অক্টোবর চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। এতে অপরিশোধিত চিনির আমদানি খরচ প্রতি কেজিতে ১১ টাকা ১৮ পয়সা এবং পরিশোধিত চিনির খরচ ১৪ টাকা ২৬ পয়সা কমে এসেছে।

খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের নেওয়া এ পদক্ষেপগুলো সামগ্রিকভাবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের জন্য স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *