
এস এম সালমান হৃদয়, বগুড়া

শিক্ষক সমাজের প্রকৃত আলোকবর্তিকা। একজন আদর্শবান, সত্ ও মেধাবী শিক্ষক কেবল জ্ঞান বিতরণই করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের পথ প্রদর্শক হয়ে ওঠেন। তেমনই একজন শিক্ষকের নাম মোঃ আব্দুল হান্নান, যিনি বর্তমানে পীরগাছা এ এফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সততা, ভদ্রতা, নম্রতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি গভীর আন্তরিকতা তাকে শুধু একজন সফল শিক্ষক নয়, বরং শিক্ষার্থীদের কাছে অভিভাবকসুলভ বন্ধুতে পরিণত করেছে।
তার শিক্ষকতা জীবনের শুরু যশোপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। প্রথম থেকেই তিনি ছিলেন ভিন্নধর্মী। প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বিষয়বস্তু বোঝাতে ধৈর্য ও যত্নশীলতা ছিল তার মূল হাতিয়ার। কোনো শিক্ষার্থী যদি পাঠ বুঝতে না পারে, তিনি বারবার সহজভাবে তা ব্যাখ্যা করতেন। শিক্ষার্থীরা অনুভব করত, তিনি কেবল শিক্ষক নন, তাদের জীবনের একজন সত্যিকারের পথপ্রদর্শক। এ কারণেই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নেন।
শিক্ষক হিসেবে তার আচরণ ছিল অভিভাবকসুলভ ও পিতৃতুল্য। তবে একইসাথে তিনি ছিলেন বন্ধুসুলভ, যা শিক্ষার্থীদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। শিক্ষার্থীরা সহজে যেকোনো সমস্যা তার কাছে বলতে পারত, আর তিনি তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন। তার এই মনোভাব শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি করত এবং তাদের শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বাড়িয়ে দিত।
বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে তিনি পীরগাছা এ এফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু ফলাফল নয়, শৃঙ্খলা, পরিবেশ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট, কারণ তারা দেখছেন তাদের সন্তানরা শুধু শিক্ষায় নয়, চরিত্র ও নৈতিকতায়ও উন্নতি করছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান সব সময় পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলীর উপর জোর দেন। তার মতে, একজন ভালো মানুষ না হলে ভালো শিক্ষার্থী হওয়া যথেষ্ট নয়। এজন্য তিনি শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন, সততা, নৈতিকতা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন।
তার প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি আজ পীরগাছার বুকে নারী শিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে। ফলাফলও বলছে একই কথা—প্রতিবছর পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করছে এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করছে।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও প্রশংসনীয়। তিনি চান বিদ্যালয়ে আধুনিক শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করতে, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা চালু করতে এবং শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে আরও বিকশিত করতে। পাশাপাশি তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে এই প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখছেন।
তার এই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, অভিভাবক ও সহকর্মী শিক্ষকদের মাঝেও আস্থা তৈরি করেছে। সহকর্মীরা জানান, তিনি সব সময় সহযোগিতামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করেন এবং সবার মতামতকে মূল্য দেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়েছে।
শিক্ষক হিসেবে তার জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের কেবল জ্ঞানী মানুষ নয়, সৎ, নৈতিক ও মানবিক গুণাবলীর অধিকারী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আজ তার সেই লক্ষ্য সফলতার পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
মোঃ আব্দুল হান্নানের মতো একজন শিক্ষক সমাজে বিরল। তার সততা, মেধা ও কর্মনিষ্ঠার আলোয় আলোকিত হচ্ছে পীরগাছা এ এফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা, অভিভাবক ও এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন—তার সুদক্ষ নেতৃত্বে বিদ্যালয় আগামী দিনে আরও উন্নতি সাধন করবে এবং নারী শিক্ষার প্রসারে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।