
এস এম সালমান হৃদয়, বগুড়া

যমুনা ও বাঙালি নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দী-সোনাতলা) আসন ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত রাজনৈতিক চিত্র ধারণ করেছে। ডিসেম্বর ২০২৩ সালের ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৫৬৯ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ৪ জন। এই আসনে ভোটারদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তুলনামূলক বেশি, যা নির্বাচনী লড়াইকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলছে।
বর্তমান এমপি শাহাদারা মান্নান ২০২৪ সালে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণার কারণে এ আসনে তাদের সক্রিয়তা নেই বললেই চলে। ফলে ভোটের মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী।
জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনকে মাঠে নামিয়েছে। তিনি তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মাধ্যমে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে জোর দিচ্ছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতির কারণে জামায়াত প্রার্থী তুলনামূলকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
বিএনপি এ আসনকে নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করছে এবং যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মণিপঞ্চায়েত কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজসেবক বিএনপির নেতা আলহাজ্ব মহিদুল ইসলাম রিপন, বগুড়া জেলা ড্যাবের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. শাহ্ মোঃ শাহজাহান আলী, কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সারিয়াকান্দী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ এ এস এম রফিকুল ইসলাম, বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মোঃ রবিউল হোসেন রবি, সারিয়াকান্দী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মোঃ মাছুদার রহমান হিরু মণ্ডল, বগুড়া জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব জাকির, জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন চৌধুরী, কর্নেল (অব.) জগলুল আহসান এবং প্রফেসর ড. মোঃ ছামছুল আল। প্রত্যেকেই নিজস্ব কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে সক্রিয়ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা বলছেন, তারা এমন প্রার্থী চান যিনি নদীমাতৃক এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম। বিশেষ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন প্রতিরোধ, কৃষি খাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানোন্নয়ন তাদের কাছে প্রধান অগ্রাধিকার। তারা মনে করেন, শুধু রাজনৈতিক দল নয়, প্রার্থীর ব্যক্তিগত সক্ষমতা এবং এলাকার জন্য উন্নয়নমুখী ভাবনাই ভোট দেওয়ার মূল মানদণ্ড।
ভোটারদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ থাকার কারণে এবং জাতীয় পার্টির শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী প্রার্থীর মধ্যে। এই দ্বিমুখী লড়াইয়ে প্রার্থী পরিচিতি, জনসংযোগ ও তৃণমূল স্তরের কার্যক্রমই শেষ পর্যন্ত ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বগুড়া-১ আসনে নির্বাচনের ফলাফলে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, দলীয় ঐতিহ্য এবং স্থানীয় জনস্বার্থের সমন্বয়ই সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে। বিএনপি যদি সঠিক ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, তবে জয়ের সম্ভাবনা শক্তিশালী। অন্যদিকে, জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন তার তৃণমূল শক্তি ব্যবহার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যেতে পারেন।
এছাড়া ভোটাররা আশা করছেন, নির্বাচনের সময় প্রতিটি প্রার্থী তাদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এবং জনসংযোগ নিশ্চিত করবেন। নদীমাতৃক অঞ্চলে বন্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ভোটারদের রায়কে প্রভাবিত করবে। ফলে ২০২৬ সালের নির্বাচনে বগুড়া-১ আসন হবে নজরকাড়া দ্বিমুখী লড়াইয়ের একটি কেন্দ্রীয় ক্ষেত্র।